Pages

Wednesday, 28 August 2013

মাটি ও মানুষ : ধানের পোকামাকড়

মাটি ও মানুষ : ধানের পোকামাকড়: ধানের পোকামাকড়  বাংলাদেশে মোট ফসলী জমির প্রায় ৭৬% জমিতে ধান চাষ করা হয় । এর প্রায় ৭০% জমিতেই আধুনিক জাতের ধান চাষ করা হচ্ছ । বর্তমানে দ...

ধানের পোকামাকড়



ধানের পোকামাকড়
 বাংলাদেশে মোট ফসলী জমির প্রায় ৭৬% জমিতে ধান চাষ করা হয়এর প্রায় ৭০% জমিতেই আধুনিক জাতের ধান চাষ করা হচ্ছবর্তমানে দেশে প্রায় ১০ লক্ষ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান আবাদ করা হচ্ছেস্থানীয় জাতের তুলনায় এসব জাতে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়এসব আধুনিক জাতের ভাল ফলন পাওয়ার জন্য স্থানীয় জাতের তুলনায় বেশি সার ও সেচ দিতে হয়এজন্য পোকামাকড়ের আক্রমণও বৃদ্ধি পায়১৯৮৫ সালে এ দেশে ধান ফসলের জন্য ক্ষতিকর ১৭৫ প্রজাতির পোকাকে শক্ত করা হয় (করিম ১৯৮৫)পরবর্তীতে২০০৩ সালে ২৬৬টি প্রজাতির পোকাকে ধানের ক্ষতিকর পোকা হিসেবে শনাক্ত করা হয় (ইসলাম ও অন্যান্য ২০০৩)এর মধ্যে সব পোকা সব মৌসুমে বা সব জায়গার ধান ফসলে ক্ষতি করে না২০ প্রজাতির পোকাকে ধান ফসলের সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতিকর পোকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়তবে বাংলাদেশে মাজরা, পামরি, বাদামী গাছ ফড়িং ধানের প্রধান তিনটি ক্ষতিকর পোকা।  

সূচিপত্র

১.         ধানের পোকামাকড়

১.১        মাজরা পোকা

১.২       নলি মাছি

১.৩       পাতা মাছি

১.৪       পামরী পোকা

১.৫       চুংগী পোকা

১.৬       পাতা মোড়ানো পোকা

১.৭       লেদা পোকা

১.৮       লম্বাশুঁড় উড়চুঙ্গা

১.৯       ঘাস ফড়িং

১.১০      সবুজ শুঁড় লেদা পোকা

১.১১      ঘোড়া পোকা

১.১২      সবুজ পাতা ফড়িং

১.১৩      আঁকাবাঁকা পাতা ফড়িং

১.১৪      থ্রিপস

১.১৫      বাদামী গাছ ফড়িং

১.১৬      সাদা পিঠ গাছ ফড়িং

১.১৭      ছাতরা পোকা

১.১৮      গান্ধি পোকা

১.১৯      শীষকাটা লেদা পোকা

১.২০     উরচুংগা

১.২১      গুদামজাত শস্যের পোকা

১.২১.১   কেড়ি পোকা

১.২১.২   লেসার গ্রেইন বোরার

১.২১.৩   অ্যাঙ্গোময়েস গ্রেইন মথ

১.২১.৪   রেড ফ্লাওয়ার বিট্



মাজরা পোকা
তিন ধরনের মাজরা পোকা বাংলাদেশের ধান ফসলের ক্ষতি করে। যেমন- হলুদ মাজরা। কালো মাথা মাজরা এবং গোলাপী মাজরা । মাজরা পোকার কীড়াগুলো কান্ডের ভেতরে থেকে খাওয়া শুরু করে এবং ধীরে ধীরে গাছের ডিগ পাতার গোড়া খেয়ে কেটে ফেলে। ফলে ডিগ পাতা মারা যায়। একে  ‘মরা ডিগ’ বা ‘ডেডহার্ট ’ বলে। গাছে শীষ আসার পূর্ব পর্যন্ত এ ধরনের ক্ষতি হলে মরা ডিগ দেখতে পাওয়া যায়। থোড় আসার আগে মরা ডিগ দেখা দিলে বাড়তি কিছু কুশী উৎপাদন করে গাছ আংশিকভাবে ক্ষতি পূরণ করতে পারে।

ক্রিসেক রোগের অথবা ইঁদুরের ক্ষতির নমুনার সাথে মাঝে মাঝে মাজরা পোকা দ্বারা সৃষ্ট ক্ষত মরা ডিগ বলে ভুল হতে পারে। মরা ডিগ টান দিলেই সহজে উঠে আসে। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত গাছের কান্ডে মাজরা পোকা খাওয়ার দরুণ ছিদ্র এবং খাওয়ার জায়গায় পোকার মল দেখতে পাওয়া যায়।

শীষ আসার পর মাজরা পোকা ক্ষতি করলে স¤পূর্ণ শীষ শুকিয়ে যায়। একে ‘সাদা শীষ’, ‘মরা শীষ’ বা ‘হোয়াইট হেড’ বলে। খরায় বা ইঁদুরের ক্ষতির নমুনা হোয়াইট হেড-এর মত দেখা যেতে পারে। কীড়া যদি পাতার খোলের ভেতরে খায় এবং কান্ডের ভেতরের অংশ স¤পূর্ণভাবে কেটে না দেয় তাহলে ধানগাছের আংশিক ক্ষতি হয় এবং শীষের গোড়ার দিকের কিছু ধান চিটা হয়ে যায়।

মাজরা পোকার আক্রমণ হলে, কান্ডের মধ্যে কীড়া, তার খাওয়ার নিদর্শন ও মল পাওয়া যায়, অথবা কান্ডের বাইরের রং বিবর্ণ হয়ে যায় এবং কীড়া বের হয়ে যাওয়ার ছিদ্র থাকে। গাছে মাজরা পোকার ডিমের গাদা দেখলে বুঝতে হবে গাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হলুদ মাজরা পোকা পাতার ওপরের অংশে ডিম পাড়ে এবং গোলাপী মাজরা পোকা পাতার খোলের ভিতরের দিকে ডিম পাড়ে। হলুদ মাজরা পোকার ডিমের গাদার ওপর হালকা ধূসর রঙের একটা আবরণ থাকে। কালোমাথা মাজরা পোকার ডিমের গাদার ওপর মাছের আঁশের মত একটা সাদা আবরণ থাকে, যা ডিম ফোটার আগে ধীরে ধীরে গাঢ় রং ধারণ করে।

মাজরা পোকার কীড়াগুলো ডিম থেকে ফুটে রেরুবার পর আস্তে আস্তে কান্ডের ভেতরে প্রবেশ করে। কীড়ার প্রথমাবস্থায় এক একটি ধানের গুছির মধ্যে অনেকগুলো করে গোলাপী ও কালোমাথা মাজরার কীড়া জড়ো হতে দেখা যায়। কিন্তু হলুদ মাজরা পোকার কীড়া ও পুত্তলীগুলো কান্ডের মধ্যে যে কোন জায়গায় পাওয়া যেতে পারে।
আলোর চার পাশে যদি প্রচুর মাজরা পোকার মথ দেখতে পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে ক্ষেতের মধ্যে মথগুলো ডিম পাড়া শুরু করেছে।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    নিয়মিতভাবে ক্ষেত পর্যবেক্ষণের সময় মাজরা পোকার মথ ও ডিম সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেললে মাজরা পোকার সংখ্যা ও ক্ষতি অনেক কমে যায়। থোর আসার পূর্ব পর্যন্ত হাতজাল দিয়ে মথ ধরে ধ্বংস করা যায়।
#    ক্ষেতের মধ্যে ডালপালা পুঁতে পোকা খেকো পাখির বসার সুযোগ করে দিলে এরা পূর্ণবয়¯ক মথ খেয়ে এদের সংখ্যা কমিয়ে ফেলে।
#    মাজরা পোকার পূর্ণ বয়¯ক মথের প্রাদুর্ভাব যখন বেড়ে যায় তখন ধান ক্ষেত থেকে ২০০-৩০০ মিটার দূরে আলোক ফাঁদ বসিয়ে মাজরা পোকার মথ সংগ্রহ করে মেরে ফেলা যায়।
#    যে সব অঞ্চলে হলুদ মাজরা পোকার আক্রমণ বেশী, সে সব এলাকায় সম্ভব হলে চান্দিনার (বি আর ১) মত হলুদ মাজরা পোকা প্রতিরোধ স¤পন্ন জাতের ধান চাষ করে আক্রমণ প্রতিহত করা যায়।
#    ধানের জমিতে শতকরা ১০-১৫ ভাগ মরা ডিগ অথবা শতকরা ৫ ভাগ মরা শীষ পাওয়া গেলে অনুমোদিত কীটনাশক   (যেমন- ডায়াজিনন ৬০ ইসি, কার্বোফুরান ৫জি, ফেনিট্রথিয়ন ৫০ ইসি ইত্যাদি) ব্যবহার করা।

গলমাছি বা নলিমাছি
এ পোকার আক্রামণের ফলে ধান গাছের মাঝখানের পাতাটা পিঁয়াজ পাতার মত নলাকার হয়ে যায়। এ জন্য এ পোকার ক্ষতির নমুনাকে ‘পিঁয়াজ পাতা গল’ বা ‘নল’ বলা হয়ে থাকে। এ গলের বা নলের প্রথমাবস্থায় রং হালকা উজ্জ¦ল সাদা বলে একে ‘সিলভার শুট’ বা ‘রূপালী পাতা’ বলা হয়। পেঁয়াজ পাতা গল বড় বা ছোট হতে পারে। ছোট হলে সনাক্ত করতে অনেক সময় অসুবিধা হয়। গল হলে সে গাছে আর শীষ বের হয় না। তবে গাছে কাইচ থোড় এসে গেলে গলমাছি আর গল সৃষ্টি করতে পারেনা।
গাছের মাঝখানের পাতাটা গল বা পিঁয়াজ পাতার মত হয়ে যায়। তারই গোড়ায় বসে গলমাছির কীড়াগুলো খায়। কীড়াগুলো এই গলের মধ্যেই পুত্তলীতে পরিণত হয় এবং এই গলের একেবারে ওপরে ছিদ্র করে পুত্তলী থেকে পূর্ণ বয়¯ক গলমাছি বেরিয়ে আসে। শুধু পুত্তলীর কোষটা সেখানে লেগে থাকে। পূর্ণ বয়স্ক গলমাছি দেখতে একটা মশার মত। স্ত্রী গলমাছির পেটটা উজ্জল লাল রঙের হয়। এরা রাতে আলোতে আসে, কিন্তু দিনের বেলায় বের হয় না। স্ত্রী গলমাছি সাধারণতঃ পাতার নীচের পাশে ডিম পাড়ে, তবে মাঝে মধ্যে পাতার খোলের উপরও ডিম পাড়ে।
গলমাছির বাৎসরিক বংশবৃদ্ধি মৌসুমী আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। শু®ক মৌসুমে গলমাছি নির্জীব থাকে এবং ঝরা ধান বা ঘাসের মধ্যে পুত্তলী অবস্থায় বেঁচে থাকে। বর্ষা মৌসুম শুরু হলেই পূর্ণ বয়স্ক গলমাছি তৎপর হয়ে ওঠে এবং ঘাস জাতীয় বিকল্প গাছের খাদ্য খেয়ে এক বা একাধিক বংশ অতিক্রম করে।  ঘাস জাতীয় গাছে গলমাছির এক একটি জীবনচক্র স¤পূর্ণ হতে ৯-১৪ দিন এবং ধানের ওপর ৯-২৪ দিন সময় লাগে। ধানের চারা অবস্থা থেকে যদি আক্রমণ শুরু হয় তাহলে কাইচ থোড় অবস্থা আসা পর্যন্ত সময়ে এ পোকা কয়েকবার জীবনচক্র স¤পূর্ণ করতে পারে। যে সমস্ত অঞ্চলে শুধু শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুম বিদ্যমান, সে সব অঞ্চলে বর্ষা মৌসুমের আগাম ধান ক্ষতি এড়িয়ে যেতে পারে। বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে রোপণ করলে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। বর্ষা মৌসুমে বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকলে শু®ক মৌসুমে সেচের আওতাভুক্ত ধানক্ষেত আক্রান্ত হতে পারে।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়¤ক  গলমাছি ধরে ধ্বংস করা।
#    শতকরা ৫ ভাগ পিঁয়াজ পাতার মতো হয়ে গেলে অনুমোদিত  কীটনাশক ব্যবহার করা।

পাতামাছি
পাতা মাছির কীড়া ধান গাছের মাঝখানের পাতা থেকে পুরোপুরি বের হওয়ার আগেই পাতার পাশ থেকে খাওয়া শুরু করে, ফলে ঐ অংশের কোষগুলো নষ্ট হয়ে যায়। মাঝখানের পাতা যত বাড়তে থাকে ক্ষতিগ্রস্থ অংশ ততই স্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়া যায়। পাতামাছির এই ধরনের ক্ষতির ফলে কুশী কম হয় এবং ধান পাকতে বাড়তি সময় লাগতে পারে। চারা থেকে শুরু করে কুশী ছাড়ার শেষ অবস্থা পর্যন্ত ধান গাছ এই পোকা দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। যে সমস্ত ক্ষেতে প্রায় সব সময়ই দাঁড়ানো পানি থাকে সে সব ক্ষেতেই এই পোকা বেশী আক্রমণ করে।

পূর্ণ বয়¯ক পাতা মাছি ২ মিলিমিটার লম্বা হয়। এরা পাতার উপরে একটা করে ডিম পাড়ে। ডিম ফোটার পর কীড়াগুলো কান্ডের মাঝখানে ঢুকে কান্ডের ভেতরে অবস্থিত কচি মাঝ পাতার পাশ থেকে খেতে শুরু করে। কীড়াগুলো কান্ডের ভেতরে কচি পাতার রঙের মতোই সবুজ মিশ্রিত হলদে রঙের হয়ে থাকে। এরা গাছের বাইরের পাতার খোলে এসে পুত্তলীতে পরিণত হয়। পাতামাছির জীবনচক্র ৪                  সপ্তাহে পূর্ণ হয়।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    আক্রান্ত জমি থেকে দাঁড়ানো পানি সরিয়ে দেয়া।
#    শতকরা ২৫ ভাগ ধানের পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।

পামরী পোকা
পূর্ণবয়¯ক পামরী পোকার গায়ের রং কালো এবং পিঠে কাঁটা আছে। পূর্ণবয়¯ক ও তাদের কীড়াগুলো উভয়ই ধান গাছের ক্ষতি করে। পূর্ণবয়¯ক পামরী পোকা পাতার সবুজ অংশ কুরে কুরে খাওয়ার ফলে ক্ষতিগ্র¯ত পাতার ওপর লম্বালম্বি কয়েকটি সমান্তরাল দাগ দেখতে পাওয়া যায়। বেশী ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষেতের পাতাগুলো শুকিয়ে পুড়ে যাওয়ার মত মনে হয়। এরা পাতার উপরের সবুজ অংশ এমন ভাবে খায় যে শুধু নীচের পর্দাটা বাকী থাকে। একটি ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষেতে অনেক পূর্ণ বয়¯ক পামরী পোকা দেখা  যেতে পারে। পূর্ণ বয়¯ক পোকাগুলো পূর্ববর্তী ধান ফসল থেকে নতুন ক্ষেত আক্রমণ করে। সাধারণতঃ বাড়ন্ত  গাছ আক্রান্ত বেশী হয় এবং ধান পাকার সময় পোকা থাকে না। স্ত্রী পামরী পোকা পাতার নীচের দিকে ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো পাতার দুই পর্দার মধ্যে সুড়ঙ্গ করে সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। অনেকগুলো কীড়া এভাবে খাওয়ার ফলে পাতা শুকিয়ে যায়। কীড়া এবং  পুত্তলীগুলো সুড়ঙ্গের মধ্যেই থাকে। পামরী পোকা  ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে জীবন চক্র স¤পূর্ণ করে।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    হাতজাল বা গামছা দিয়ে পোকা ধরে মেরে ফেলুন ।
#    গাছে কুশী ছাড়ার শেষ সময় পর্যন্ত পাতার গোড়ার ২-৩ সেমি (প্রায় ১ ইঞ্চি) উপর থেকে ছেটে দিয়ে শতকরা ৭৫-৯২টা পামরী পোকার কীড়া  মেরে ফেলা যায় এবং পরবর্তী আক্রমণ রোধ করা যায়।
#    শতকরা ৩৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অথবা প্রতি গোছা ধান গাছে ৪টি পূর্ণবয়¯ক পোকা থাকলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করুন।

চুংগী পোকা
ধানগাছের কুশী ছাড়ার শেষ অবস্থা আসার আগে কীড়াগুলো পাতার সবুজ অংশ লম্বালম্বি ভাবে এমন করে কুরে কুরে খায় যে শুধু মাত্র উপরের পর্দাটা বাকী থাকে। আক্রান্ত— ক্ষেতের গাছের পাতা সাদা দেখা যায়। চারা অবস্থায় এ পোকা বেশী ক্ষতি করে।

পূর্ণবয়স্ক চুংগীপোকা ৬ মিলিমিটার লম্বা এবং ছড়ানো অবস্থায় পাখা ১৫ মিমি চওড়া হয়। চুংগীপোকা রাতের বেলায় তৎপর এবং আলোতে আকর্ষিত হয়। গাছের নীচের দিকের পাতার পিছন পিঠে এরা ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো বড় চারাগাছ এবং নুতন রোয়া ক্ষেতে বেশী দেখতে পাওয়া যায়। এরা পাতার উপরের দিকটা কেটে চুংগী তৈরী করে এবং এর মধ্যে থাকে। কাটা পাতা দিয়ে তৈরী চুংগীগুলো বাতাসে  বা পানিতে ভেসে ক্ষেতের এক পাশে জমা হয় এবং দেখলে মনে হয় যেন কাঁচি দিয়ে পাতাগুলো কুচি করে কেউ কেটে ফেলেছে। চুংগী পোকা প্রায় ৩৫ দিনে এক বার জীবনচক্র স¤পূর্ণ করে।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    চুংগী পোকার কীড়া পানি ছাড়া শুকনো জমিতে বাঁচতে পারে না। তাই আক্রান্ত ক্ষেতের পানি সরিয়ে দিয়ে সম্ভব হলে কয়েকদিন জমি শুকনো রাখতে পারলে এ পোকার সংখ্যা কমানো এবং ক্ষতি রোধ করা যায়।
#    আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক মথ ধরে মেরে ফেলা।
#    চুংগীকৃত পাতা জমি থেকে সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলা।
#    শতকরা ২৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা ।

পাতা  মোড়ানো পোকা
এরা পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পাতায় সাদা লম্বা দাগ দেখা যায়। খুব বেশি ক্ষতি করলে পাতাগুলো পুড়ে পাওযার মত দেখায়। ক্ষতিগ্রস্থ  পাতার কিনার দিয়ে বিশেষ করে পাতার লালচে রেখা রোগ শুরু হতে পারে।
পূর্ণবয়স্ক ¯ত্রী পোকা পাতার মধ্য শিরার কাছে ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো পাতার সবুজ অংশ খায় এবং বড় হবার সাথে সাথে তারা পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়িয়ে একটা নলের মত করে ফেলে। মোড়ানো পাতার মধ্যেই কীড়াগুলো পুত্তলীতে পরিণত হয়।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়স্ক মথ ধরে মেরে ফেলা।
#    জমিতে ডালপালা পুঁতে পোকাখেকো পাখির সাহায্যে পূর্ণ বয়স্ক মথ দমন করা।
#    শতকরা ২৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।

লেদা পোকা
লেদা পোকা কেটে কেটে  খায়  বলে ইংরেজীতে এদের কাটওয়ার্ম বলে। এই প্রজাতির পোকারা সাধারণতঃ শুকনো ক্ষেতের জন্য বেশী ক্ষতিকর। কারণ এদের জীবন চক্র শেষ করার জন্য শুকনো জমির দরকার হয়। পার্শ্ববর্তী ঘাসের জমি থেকে লেদা পোকার কীড়া নীচু, ভিজা জমির ধানক্ষেত আক্রমণ করে। প্রথমাবস্থায় কীড়াগুলো শুধু পাতাই খায়, কিন্তু বয়¯ক কীড়া স¤পূর্ণ পাতাই খেয়ে ফেলতে পারে। এরা চারা গাছের গোড়াও কাটে।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়¯ক  মথ ধরে মেরে ফেলুন।
#    ধান কাটার পর ক্ষেতের নাড়া পুডিয়ে দিলে বা জমি চাষ করে এ পোকার সংখ্যা অনেক কমিয়ে ফেলা যায়।
#    আক্রান্ত— ক্ষেত সেচ দিয়ে ডুবিয়ে দিয়ে এবং পাখির খাওয়ার জন্য ক্ষেতে ডালাপালা পুঁতে দিয়েও এদের সংখ্যা কমানো যায়।
#    শতকরা ২৫ ভাগ পাতার ক্ষতি হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।


লম্বাশুঁড় উরচুংগা
এ পোকার পূর্ণবয়¯ক  ও বাচ্চাগুলো ধানের পাতা এমনভাবে খায় যে পাতার কিনারা ও শিরাগুলো শুধু বাকি থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত পাতাগুলো জানালার মত ঝাঝরা হয়ে যায়।

ঘাসফড়িং
পূর্ণ বয়স্ক ঘাসফড়িং ও বাচ্চা উভয়ই ধান গাছের ক্ষতি করে থাকে। এরা ধানের পাতার পাশ থেকে শিরা পর্যন্ত খায়। ঘাসফড়িং  এর বিভিন্ন প্রজাতি এক সাথে অনেক সংখ্যায় ক্ষেত আক্রমণ করে। তাদেরকে ইংরেজীতে লোকাষ্ট এবং বাংলায় পংগপাল বলা হয়।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    হাত জাল দিয়ে পোকা ধরে মেরে ফেলা।
#    ডালপালা পুঁতে পোকা খেকো পাখির সাহায্য নেয়া।
#    শতকরা ২৫ ভাগ ধানের পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।

সবুজ-শুঁড় লেদা পোকা
পূর্ণবয়স্ক  মথ পাতার ওপর ডিম পাড়ে। কীড়াগুলো সবুজ রঙের এবং মাথার উপর এবং লেজের দিকে শিং এর মতো এক জোড়া করে শুড় আছে। শুধুমাত্র কীড়াগুলো ধানের পাতার পাশ থেকে খেয়ে ক্ষতি করে থাকে।

ঘোড়া পোকা সবুজ সেমিলুপার
এ পোকার কীড়াগুলোও সবুজ-শুঁড় লেদা পোকার মত বড় কিন্তু মাথা বা লেজে শিং নেই। কীড়াগুলো ধানের পাতার পাশ থেকে খায়। এরা চারা অবস্থা থেকে কুশী ছাড়ার শেষ অবস্থা পর্যন্ত বেশী ক্ষতি করে থাকে। কীড়াগুলো পিঠ কুচকে চলে।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    আলোক ফাঁদের সাহায্যে পূর্ণবয়¯ক মথ ধরে মেরে ফলা।
#    শতকরা ২৫ ভাগ ধানের পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কীটনাশক ব্যবহার করা।

¯কীপার পোকা
এ পোকার কীড়াগুলো ধানের পাতার পাশ থেকে খেতে খেতে মধ্য শিরার দিকে আসে (ছবি ৩৩)। সবুজ-শুড় লেদা পোকা, সেমিলুপার এবং এ পোকার খাওয়ার ধরন ও ক্ষতির নমুনা একই রকম।

পূর্ণবয়¯ক ¯কীপার একটি মথ। এর শুঁড় দুটো দেখতে অনেকটা আংটার মত (ছবি ৩৫)। এরা বেশ তাড়াতাড়ি আঁকা-বাঁকা ভাবে ওড়ে। এ পোকার পুত্তলী মোড়ানো পাতার সাথে রেশমী সুতার মত আঠা দিয়ে আটকানো থাকে (ছবি ৩৪)।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    আলোক ফাঁদের সাহায্যে  পূর্ণবয়¯ক মথ ধরে মেরে ফেলা।
#    শতকরা ২৫ ভাগ পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কীটনাশক ব্যবহার করা।

সবুজ পাতা ফড়িং
সবুজ পাতা ফড়িং ধান উৎপাদনকারী প্রায় সব দেশেই পাওয়া যায়। পূর্ণবয়স্ক ও বাচ্চা পোকা ধান গাছের পাতা থেকে রস শুষে খায়। এরা বেটে ধান, ক্ষণস্থায়ী হলদে রোগ, টুংরো এবং হলুদ বেটে নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায়। সাধারণতঃ টুংরো রোগ বেশি ছড়ায়। পূর্ণবয়স্ক সবুজ পাতা ফড়িং ৩-৫ মিলিমিটার লম্বা এবং গায়ে উজ্জ¦ল সবুজ রঙের সাথে বিভিন্ন কাল দাগ থাকে। এরা পাতার মধ্য শিরায় বা পাতার খোলে ডিম পাড়ে। এদের বাচ্চাগুলো পাঁচ বার খোলস বদলায় এবং এদের গায়ে বিভিন্ন ধরনের দাগ আছে ।

আঁকাবাঁকা পাতা ফড়িং
এরা বেটে গল, টুংরো এবং কমলা পাতা নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায় এবং পাতার রস শুষে খায়। পূর্ণবয়স্ক ফড়িং-এর পাখায় আঁকাবাঁকা দাগ আছে। বাচ্চাগুলো হলদে ধূসর রঙের।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    ধান ক্ষেত থেকে ২০০-৩০০ মিটার দূরে আলোক ফাঁদে সবুজ পাতাফড়িং এবং আঁকাবাঁকা পাতাফড়িং আকৃষ্ট করে মেরে ফেললে এদের সংখ্যা অনেক কমিয়ে ফেলা যায়।
#    হাতজাল দ্বারা পোকা ধরে মেরে ফেলা।
#    সবুজ পাতা ফড়িং ও টুংরো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাস¤পন্ন ধানের জাতের চাষ করা।
#    হাতজালের প্রতি টানে যদি একটি সবুজ পাতাফড়িং পাওয়া যায় এবং আশেপাশে টুংরো রোগাক্রান্ত গাছ থাকে তাহলে বীজতলা ও ধানের জমিতে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।

থ্রিপ্স
বাংলাদেশে ছয়টি প্রজাতির থ্রিপ্স পোকা ধান গাছ আক্রমণ করে। পূর্ণবয়¯ক থ্রিপ্স   পোকা এবং তাদের বাচ্চারা পাতার উপরে ক্ষত সৃষ্টি করে পাতার রস শুষে খায়। ফলে পাতা লম্বালম্বিভাবে মুড়ে যায়। পাতায় খাওয়ার জায়গাটা হলদে থেকে লাল দেখা যায়। থ্রিপ্স পোকা ধানের চারা অবস্থায় এবং কুশী ছাড়া অবস্থায়  আক্রমণ করতে পারে। যে সমস্ত জমিতে সব সময় দাঁড়ানো পানি থাকে না, সাধারণতঃ সে সব ক্ষেতে থ্রিপ্স-এর আক্রমণ বেশী হয়।

পূর্ণবয়¯ক থ্রিপ্স পোকা খুবই ছোট, ১-২ মিলিমিটার লম্বা এবং এদের শুড়ে ৫-৮টা ভাগ আছে। এরা পাখা বিশিষ্ট বা পাখা বিহীন হতে পারে। পাখা বিশিষ্ট পোকার পাখাগুলো সরু, পিঠের উপর লম্বালম্বিভাবে বিছানো থাকে এবং পাখার পাশে কাঁটা আছে। ডিম পাড়ার জন্য ¯এী পোকার পেছনে করাতের মত ধারালো একটা অংগ আছে যা দিয়ে এরা পাতার মধ্যে ডিম ঢুকিয়ে দিতে পারে। ডিমগুলো সব একই আকারের, খুবই ছোট, এক মিলিমিটারের চার ভাগের এক ভাগ লম্বা এবং দশ ভাগের এক ভাগ চওড়া। প্রথম অবস্থায় ডিমগুলোর রং স্বচ্ছ থাকে এবং ডিম ফোটার আগে আস্তে আস্তে হলদে হয়ে যায়। ডিম থেকে সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলো প্রথমে স্বচ্ছ এবং পরে হলদে রং ধারণ করে। সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলো কিছুক্ষণ নিশ্চল থাকে, পরে মাঝখানের কচি পাতা, পাতার খোল এবং নতুন বের হওয়া ধানের শীষ খাওয়া শুরু করে এবং পূর্ণ বয়¯ক পোকায় পরিণত হওয়ার পরও তাদের জীবনকাল সেখানেই কাটায়।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    নাইট্রোজেন জাতীয় সার, যেমন ইউরিয়া কিছু পরিমাণ উপরি প্রয়োগ করে এই পোকার ক্ষতি কিছুটা রোধ করা যায়।
#    থ্রিপ্স পোকা দমনের জন্য আক্রান্ত জমির শতকরা ২৫ ভাগ ধানের পাতা ক্ষতিগ্রস্ত হলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাদামী গাছফড়িং
যে সমস্ত ধানের জাতে বাদামী গাছফড়িং প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই সে সব জাতের ধানে এরা খুব তাড়াতাড়ি বংশ বৃদ্ধি করে, ফলে এ পোকার সংখ্যা এত বেড়ে যায় যে, আক্রান্ত ক্ষেতে বাজ পড়ার মত হপারবার্ণ - এর সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত গাছগুলো প্রথমে হলদে এবং পরে শুকিয়ে মারা যায়। বাদামী গাছফড়িং গ্রাসিস্টান্ট, র‌্যাগেটস্টান্ট ও উইল্টেডস্টান্ট নামক ভাইরাস রোগ ছড়ায়। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও এ সমস্ত রোগ দেখা যায়নি। লম্বা পাখাবিশিষ্ট পূর্ণবয়স্ক বাদামী ফড়িংগুলো প্রথমে ধান ক্ষেত আক্রান্ত করে। এরা পাতার খোলে এবং পাতার মধ্য শিরায় ডিম পাড়ে। ডিমগুলোর ওপর পাতলা চওড়া একটা আবরণ থাকে। ডিম ফুটে বাচ্চা (নিমফ) বের হতে ৭-৯ দিন সময় লাগে। বাচ্চাগুলো ৫ বার খোলস বদলায় এবং পূর্ণবয়¤ক ফড়িং এ পরিণত হতে ১৩-১৫ দিন সময় নেয়। প্রথম পর্যায়ের (ইন¯টার) বাচ্চাগুলোর রং সাদা এবং পরের পর্যায়ের বাচ্চাগুলো বাদামী। বাচ্চা থেকে পূর্ণবয়¯ক বাদামী গাছফড়িং ছোট পাখা এবং লম্বা পাখা বিশিষ্ট হতে পারে। ধানে শীষ আসার সময় ছোট পাখা বিশিষ্ট ফড়িং এর সংখ্যাই বেশী থাকে এবং স্ত্রী পোকাগুলো সাধারণত: গাছের গোড়ার দিকে বেশি থাকে। গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে লম্বা পাখা বিশিষ্ট ফড়িং এর সংখ্যাও বাড়তে থাকে, যারা এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় উড়ে যেতে পারে।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    যে সব এলাকায় সব সময় বাদামী গাছফড়িং এর উপদ্রব হয় সে সব এলাকায় তাড়াতাড়ি পাকে (যেমন চান্দিনা) এমন জাতের ধান চাষ করা।
#    ধানের চারা ৩০-৪০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে লাগানো।
#    জমিতে পোকা বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলা।
#    উর্বর জমিতে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ পরিহার করা ।
#    বাদামী গাছফড়িং প্রতিরোধ ক্ষমতাস¤পন্ন জাত  ব্রি ধান-৩৫ চাষ করা।
#    ক্ষেতে শতকরা ৫০ ভাগ গাছে অন্ততঃ একটি মাকড়সা থাকলে কীটনাশক প্রয়োগ না করা।
#    শতকরা ৫০ ভাগ ধান গাছে ২-৪টি ডিমওয়ালা স্ত্রী পোকা অথবা ১০টি বাচ্চা পোকা প্রতি গোছায় পাওয়া গেলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা।

সাদা পিঠ গাছ ফড়িং
অধিকাংশ সময় বাদামী গাছ ফড়িং এর সাথে এদের দেখতে পাওয়া যায় এবং সেজন্যে এ দু’জাতের পোকাকে সনাক্ত করতে ভুল হয়। সাদা পিঠ গাছ ফড়িং-এর বাচ্চাগুলো (নিমফ্) সাদা থেকে বাদামী কালো ও সাদা মিশ্রিত রঙের হয়ে থাকে। পূর্ণবয়¯ক ফড়িংগুলো ৫ মিলিমিটার লম্বা এবং তাদের পিঠের ওপর একটা সাদা লম্বা দাগ আছে। পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী ফড়িংগুলোই শুধু ছোট পাখা বিশিষ্ট। সাদা পিঠ গাছ ফড়িং কোন ভাইরাস রোগ ছড়ায় না কিন্তু গাছের রস শুষে খেয়ে হপারবার্ণ সৃষ্টি করে। এতে পাতাগুলো পুড়ে যাওয়ার মত হতে পারে।

দমন ব্যবস্থাপনা
এ পোকা দমনের জন্য বাদামী গাছ ফড়িংয়ের জন্য উল্লেখিত দমন ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে এবং
#    সাদাপিঠ গাছ ফড়িং প্রতিরোধ ক্ষমতাস¤পন্ন জাত যেমন বিআর ৬, ১৪, ২৩, ২৬ ও ব্রি ধান ২৭, ৩৩ চাষ করা যেতে পারে।

ছাতরা পোকা

শুকনো আবহাওয়ায় বা খরার সময়ে এবং যে সমস্ত জমিতে বৃষ্টির পানি মোটেই দাঁড়াতে পারে না সে ধরনের অবস্থায় ছাতরা পোকার আক্রমণ বেশী দেখতে পাওয়া যায়। এরা গাছের রস শুষে খাওয়ার ফলে গাছ খাটো  হয়ে যায়। আক্রমণ বেশী হলে ধানের শীষ বের হয় না। আক্রান্ত ক্ষেতের গাছগুলো জায়গায় জায়গায় বসে গেছে বলে মনে হয়।

স্ত্রী ছাতরা পোকা খুব ছোট, লালচে সাদা রঙের, নরম দেহবিশিষ্ট, পাখাহীন এবং গায়ে সাদা মোমজাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে। এরাই গাছের ক্ষতি করে। এক সাথে অনেকগুলো ছাতরা পোকা গাছের কান্ড ও খোল এবং পাতার খোলের মধ্যবর্তী জায়গায় থাকে। পুরুষ পোকা ¯এী পোকার অনুপাতে সংখ্যায় খুবই কম বলে বিশেষ ক্ষতি করতে পারে না। এদের দু’টো পাখা আছে।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    আক্রমণের প্রথম দিকে সনাক্ত করতে পারলে আক্রান্ত গাছগুলো উপরে নষ্ট করে ফেলে এ পোকার আক্রমণ ও ক্ষতি ফলপ্রসূভাবে কমানো যায়।
#    শুধুমাত্র আক্রান্ত জায়গায় ভাল করে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করলে দমন খরচ কম হয়।

গান্ধি পোকা
গান্ধি পোকা ধানের দানা আক্রমণ করে। পূর্ণবয়স্ক এবং বাচ্চা পোকা (নিম্ফ্) উভয়েই ধানের ক্ষতি করে। ধানের দানায় যখন দুধ সৃষ্টি হয় তখন ক্ষতি করলে ধান চিটা হয়ে যায়। এরপরে আক্রমণ করলে ধানের মান খারাপ হয়ে যায় এবং চাল ভেঙ্গে যায়। পূর্ণবয়¤ক গান্ধি পোকা ধূসর রঙের এবং কিছুটা সরু। পাগুলো ও শুঁড়দুটো লম্বা। এরা ধানের পাতা ও শীষের ওপর সারি করে ডিম পাড়ে। সবুজ রঙের বাচ্চা এবং পূর্ণ বয়¤ক গান্ধি পোকার গা থেকে বিশ্রী গন্ধ বের হয়।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    এ পোকার সংখ্যা যখন খুব বেড়ে যায় তখন ক্ষেত থেকে ২০০-৩০০ মিটার দূরে আলোক ফাঁদ বসিয়ে আকৃষ্ট করে মেরে ফেললে এদের সংখ্যা অনেক কমে যায়।
#    ধানের প্রতি গোছায় ২-৩টি গান্ধি পোকা দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করুন। কীটনাশক বিকাল বেলায় প্রয়োগ করতে হবে।

শীষকাটা লেদাপোকা
এ ধরনের পোকার স্বভাব অনুযায়ী এরা একসংগে বহু সংখ্যায় থাকে বলে ইংরেজীতে এদের আর্মি ওয়ার্ম বলে। এরা এক ক্ষেত খেয়ে আর এক ক্ষেত আক্রমণ করে। লেদা পোকা বিভিন্ন জাতের ঘাস খায়। শুধু কীড়াগুলো ক্ষতি করতে পারে (ছবি ৫৫)। কীড়াগুলো প্রাথমিক অবস্থায় পাতার পাশ থেকে কেটে খায়। কীড়াগুলো বড় হলে আধা পাকা বা পাকা ধানের শীষের গোড়া থেকে কেটে দেয় এবং এজন্য এর নাম শীষকাটা লেদা পোকা। বোনা ও রোপা আমনের এটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক পোকা।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    ধান কাটার পর এ পোকার কীড়া ও পুত্তলী ক্ষেতের নাড়া বা মাটির ফাটলের মধ্যে থাকে। তাই ধান কাটার পর নাড়া পুড়িয়ে দিয়ে বা ঐ ক্ষেত চাষ করে ফেললে পুত্তলী ও কীড়া মারা যায় এবং পরবর্তী মৌসুমে এ পোকার সংখ্যা সামগ্রিকভাবে কমানো যায়।
#    বাঁশ দিয়ে পরিপক্ক ধান হেলিয়ে বা শুইয়ে দিলে আক্রমণ কমে যায়।
#    ক্ষেতের চারপাশে নালা করে সেখানে কেরোসিন মিশ্রিত পানি দিয়ে রাখলে কীড়া আক্রান্ত ক্ষেত থেকে আসতে পারে না।
#    এ ছাড়া আক্রান্ত ক্ষেতে একটু বেশী করে সেচ এবং পাখির খাওয়ার সুবিধের জন্য ক্ষেতের বিভিন্ন স্থানে ডালপালা পুঁতে দিয়ে এ পোকার সংখ্যা কমানো যায়।
#    ধানের ক্ষেতে প্রতি ১০ বর্গমিটারে ২-৫টি কীড়া পাওয়া গেলে কীটনাশক ব্যবহার করা। তবে খেয়াল রাখতে হবে  পাকা ধানে যেন কীটনাশক প্রয়োগ করা না হয়।

উরচুংগা
উরচুংগা গাছের গোড়া কেটে দেয়, ফলে গাছ মারা যায়। অনেক সময় এদের ক্ষতি মাজরা পোকার ক্ষতির সাথে ভুল হতে পারে। উরচুংগা গাছের নতুন শিকড় এবং মাটির নীচে গাছের গোড়া খেয়ে ফেলে। কিন্তু মাজরা পোকা কান্ডের ভেতরটা খায়। পানি আটকে রাখা যায় না এমন ধান ক্ষেতে উরচুংগা একটা সমস্যা। এ পোকা তখনই আক্রমণ করে যখন ক্ষেতে আর পানি থাকে না, অথবা স্থানে স্থানে যখন পানি কম বেশী হয় এবং মাটি দেখা যায়। ক্ষেত পানি দিয়ে ডুবিয়ে দিলে উরচুংগা আইলে বা উঁচু জায়গায় চলে যায়। সেখানে মাটির নীচে শক্ত স্থানে ডিম পাড়ে।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    সেচ দিয়ে ক্ষেত ডুবিয়ে দিয়ে এ পোকার আক্রমণ রোধ করা যায়।
#    চালের গুড়া ও কীটনাশকের সংমিশ্রণে তৈরি বিষটোপ ধানের জমিতে বা আইলে ছিটিয়ে দিয়ে উরচুংগা দমন করা যেতে পারে।
#    বিষটোপের পরিবর্তে দানাদার কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।

গুদামজাত শস্যের পোকা
গুদামজাত বিভিন্ন খাদ্যশস্য ও বীজ বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ দ্বারা আক্রান্ত হয়। ফলে খাদ্য শস্যের ওজন কমে যায়, বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা এবং পুষ্টিমান হ্রাস পায়। এ ছাড়া খাদ্য দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে খাওয়ার অনুপযোগী হয় এবং বাজারমূল্য হ্রাস পায়। প্রায় ৬০ টিরও বেশী পোকা গুদামজাত শস্যে ক্ষতি করে থাকে। কয়েকটি প্রধান অনিষ্টকারী পোকার বিবরণ দেয়া হলো।

কেড়ি পোকা
পূর্ণবয়¯ক ও কীড়া উভয়ই গুদামজাত শস্যের ক্ষতি করে থাকে। এ পোকার  সামনের দিকে লম্বা শুঁড় আছে। এই পোকা শস্যদানাতে শুঁড়ের সাহায্যে গর্ত করে ভিতরের শাঁস খায়।

লেসার গ্রেইন বোরার
কীড়া ও পরিণত পোকা উভয়ই গুদামজাত শস্যের ক্ষতি করে থাকে (ছবি ৫৮)। আকারে ছোট, মাথা গোল ও গ্রীবা নিচের দিকে নোয়ানো, তাই উপর থেকে দেখলে চোখে পড়ে না। এ পোকার খুব পেটুক প্রকৃতির এবং শস্যদানার ভিতরের অংশ কুড়ে কুড়ে খেয়ে গুঁড়ো করে ফেলে।

অ্যাঙ্গোময়েস গ্রেইন মথ
শুধুমাত্র কীড়া ক্ষতি করে থাকে। পূর্ণবয়¯ক পোকা ছোট, হালকা খয়েরী রংয়ের এবং সামনের পাখার কয়েকটি দাগ দেখা যায় (ছবি ৫৯)। পিছনের পাখার শীর্ষপ্রান্ত বেশ চোখা। শস্যদানার ভিতর ছিদ্র করে ঢুকে শাঁস (বহফড়ংঢ়বৎস) খেতে থাকে এবং পুত্তলী পর্যন্ত সেখানে থাকে।

রেড  ফœাওয়ার বিট্ল
পরিণত পোকা ও  কীড়া উভয়ই ক্ষতি করে থাকে। পূর্ণবয়¯ক পোকা আকারে খুবই ছোট এবং লালচে বাদামী রঙের। এ পোকা দানাশস্যের গুঁড়া (আটা, ময়দা, সুজি) এবং ভ্রুণ খেতে বেশী পছন্দ করে। আক্রান্ত খাদ্যসামগ্রী দুর্গন্ধযুক্ত ও খারাপ স্বাদের হয়।

দমন ব্যবস্থাপনা
#    গুদাম ঘর বা শস্য সংরক্ষণের পাত্র পরি¯কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং ফাটল থাকলে তা মেরামত করা। গুদামঘর বায়ূরোধী, ইঁদুরমুক্ত এবং মেঝে আর্দ্রতা প্রতিরোধী হতে হবে। নতুন ও পুরোনো খাদ্যশস্য একত্রে রাখা বা মিশানো যাবে না।
#    খাদ্য মজুদের ২-৪ সপ্তাহ পূর্বে গুদাম পরি¯কারের পর অনুমোদিত  কীটনাশকের দ্বারা গুদামের মেঝে, দেয়াল, দরজা, উপরের সিলিং প্রভৃতিতে স্প্রে করা যেতে পারে।
#    কিছু দেশীয় গাছ গাছড়া যেমন- নিম, নিশিন্দা ও বিষকাটালীর পাতা শুকিয়ে গুড়া করে খাদ্য শস্যের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করে পোকা দমন করা যায়।
#    কিছুদিন বিরতি দিয়ে গুদামজাত খাদ্য শস্য রৌদ্রে শুকিয়ে পোকা মাকড়ের আক্রমণ রোধ করা যায়।
#    গুদামজাত শস্যে পোকার আক্রমণ তীব্র হলে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বা ফসটকসিন (৪-৫ টি ট্যাবলেট/টন খাদ্যশস্য) ব্যবহার করে গুদামঘর স¤পূর্ণরূপে ৩-৪ দিন বন্ধ রাখতে হবে। বিষবা®প মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই বিষ বড়ি ব্যবহারের পূর্বে প্রয়োজনীয় সতর্কতা প্রয়োজন এবং অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে দিয়ে ব্যবহার  করানো উচিত নয়।

মাটি ও মানুষ : বার্লি চাষ ও উৎপাদন প্রযুক্তি

মাটি ও মানুষ : বার্লি চাষ ও উৎপাদন প্রযুক্তি: ফসলের নাম : বার্লি পুষ্টি মূল্যঃ পুষ্টি মানের দিক থেকে বার্লি গমের চেয়ে উন্নত । ভেজজ গুনঃ ব্যবহারঃ বার্লির অপর নাম যব। বার্লি কি...

বার্লি চাষ ও উৎপাদন প্রযুক্তি


ফসলের নাম : বার্লি

পুষ্টি মূল্যঃ পুষ্টি মানের দিক থেকে বার্লি গমের চেয়ে উন্নত ।
ভেজজ গুনঃ
ব্যবহারঃ
বার্লির অপর নাম যব। বার্লি কিছুটা লবনাক্ততা সহনশীল ফসল। বার্লি  দিয়ে
শিশুর খাদ্য, ওভালটিন, হরলিক্স প্রভৃতি সুস্বাদু খাদ্য তৈরি করা হয়।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ
 এদেশের
বার্লির চাষ দীর্ঘদিন ধরে আসছে। সাধারণত চরাঞ্চলে অনুর্বর জমিতে স্বল্প
ব্যয়ে এর চাষ করা হয়। পানি জমে না এমন বেলে দোআশ ও দোআশ মাটি বার্লি চাষের
জন্য উপযুক্ত। জমিতে ‘জো’ আসার পর মাটির প্রকার ভেদে ৩-৪ টি আড়াআড়ি চাষ ও
মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হয়।
জাত পরিচিতিঃ

বার্লির জাত
বারি বার্লি-১: ১৯৮৮ সালে সিমিট থেকে এ জাতটি বাংলাদেশে আনা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন
পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৯৪ সালে বারি বার্লি-১ নামে এ জাত অনুমোদন
করা হয়। এ জাতের উচ্চতা মাঝারি, ৮৫-৯০ সেমি । পাতার রং গাঢ় সবুজ ও কান্ড
শক্ত । গাছ সহজে নুয়ে পড়ে না । বীজ, শীর্ষ ৬ সারিতে অবস্থান করে । দানা
খোসাযুক্ত । দানার রং সোনালী । হাজার দানার ওজন ৩৬-৩৮ গ্রাম । এ দেশের
আবহাওয়ায় এর জীবনকাল ১০৮-১১২ দিন । এ জাতটিতে রোগ ও পোকার আক্রমন খুব কম।
সেচ ছাড়া চাষ করলেও হেক্টর প্রতি ২.০-২.৫ টন ফলন পাওয়া যায়। তবে একটু সেচ
প্রয়োগে ফলন বৃদ্ধি পায়।
বারি বার্লি-২: বারি বার্লি-২ জাতটি
১৯৯৪ সালে অনুমোদিত হয়। এ জাতের গাছ মাঝারি উচ্চতা সম্পন্ন । কান্ড শক্ত,
ফলে সহজে হেলে পড়ে না । জাতটি গোঁড়া পচা ও ঝলসানো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
সম্পন্ন। দানা বড়। এ জাতটির হাজার বীজের ওজন ৩৫ -৩৮ গ্রাম এবং  দানাতে ১২
-১৪% আমিষ থাকে। বারি বার্লি-২ সেচবিহীন চাষে হেক্টর প্রতি  ২.০-২.৫ টন
এবং একটি সেচ সহ চাষে ২.৫ -৩.০ টন ফলন দেয়।

বপনের সময়ঃ

মধ্য কার্তিক থেকে অগ্রহায়ণ মাস (নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর) পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়।
বীজের
হারঃ বার্লি ছিটিয়ে ও সারিতে বপন করা যায়। ছিটিয়ে হেক্টর প্রতি ১২০ কেজি
এবং সারিতে বুনলে ১০০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। সারিতে বুনলে ২ সারির মাঝে
দূরত্ব ২০ -২৫ সেমি রাখতে হবে। লাঙ্গল দিয়ে ৩.৫ সেমি গভীর নালা টেনে তাতে
বীজ বুনে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনাঃ

সাধারণত অনুর্বর জমিতে বার্লি  চাষ করা হলেও সুপারিশমত সার প্রয়োগে এর ফলন
বাড়ানো যায়। বার্লির জমিতে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করা যায়।  সারের নাম
    সারের পরিমান/শতকে    সারের পরিমান / হেক্টর   
ইউরিয়া    ৬৮৮-৭৪৯ গ্রাম    ১৭০ -১৮৫ কেজি   
টিএসপি    ৪৬৬-৫০৬ গ্রাম    ১১৫ -১২৫   কেজি   
এমওপি    ৩০৪-৩৪৪ গ্রাম    ৭৫ -৮৫   কেজি   

সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

সেচের
ব্যবস্থা থাকলে শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া এবং সবটুকু টিএসপি ও এমওপি
সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ২ কিস্তিতে বীজ বপনের ৩০- ৩৫ দিন
পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি বীজ বপনের ৫৫ -৬০ দিন পর (সেচের পর) প্রয়োগ করতে
হবে।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ রবি মৌসুমে খরা দেখা দিলে ১-২টি হালকা
সেচের ব্যবস্থা করলে ফলন বেশী পাওয়া যায়। চারা গজানোর পর ২-৩ সপ্তাহের
মধ্যে ৮-১০সেমি দূরত্বে একটি চারা রেখে বাকি চারা তুলে পাতলা করে দিতে
হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী দিয়ে দমন করতে হবে।
পোকামাকড় ব্যবস্থাপনাঃ
রোগ ব্যবস্থাপনাঃ

বার্লির পাতা ঝলসানো রোগ দমন:

ডেক্সলেরা প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা এ রোগটি ঘটে। সবুজ পাতায় ঈষৎ বাদামি
রঙের ছোট ছোট ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরবর্তীতে এ সকল দাগ বাড়তে থাকে ও গাড়
বাদামি থেকে কালো বর্ণ ধারণ করে। দাগ একত্রিত হয়ে সমস্ত পাতা বাদামি বর্ণ
ধারণ করে এবং ঝলসানোর লক্ষণ দেখা যায়। ফসলের পরিত্যক্ত অংশ,বীজ ও বায়ুর
মাধমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। বায়ুর অধিক আদ্রতা ও ২৫ ডিগ্রী সে.
তাপমাত্রা এ রোগ বিস্তারের সহায়ক।
প্রতিকার
১.    গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২.    টিল্ট ২৫০ ইসি (০.০৪%) ১ মিলি ঔষধ আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
৩.    ভিটাভেক্স-২০০ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
বার্লির গোড়া পচা রোগ দমনঃ
স্কেলেরোসিয়াম
রলফসি নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ জীবাণু প্রায় সকল
ক্ষেত্রে মাটির নিকটবর্তী কান্ড ও মূলের সংযোস'লে আক্রমণ করে। প্রথমে
গাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়, পরে দাগ গাঢ় বাদামি হয়ে আক্রান্ত স্থানের
চারিদিক ঘিরে ফেলে, ফলে গাছ শুকিয়ে মরে যায়। অনেক সময় গাছের গোড়ায় ও
মাটিতে সরিষার দানার মত বাদামি থেকে কালো রংয়ের স্কেলেরোসিয়া গুটি দেখা
যায়। রোগের জীবাণু মাটিতে বা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে
এবং বৃষ্টি ও সেচের পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। আর্দ্রতাপূর্ণ মাটিও
রোগ দ্রুত বিস্তারের জন্য সহায়ক।
প্রতিকার
১.    সব সময় মাটিতে পরিমিত আর্দ্রতা বজায় রাখা প্রয়োজন।
২.    ভিটাভেক্স-২০০ (প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম) মিশিয়ে বীজ শোধন করে বপণ করতে হবে।

গম ফসল উৎপাদন প্রযুক্তি ও চাষাবাদ ব্যবস্থাপনা


ফসলের নাম: গম

পুষ্টি মূল্যঃ গম হতে যে আটা হয় তার প্রতি ১০০ গ্রাম আটায় আমিষ ১২.১ গ্রাম, শর্করা ৬৯.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৮ মিলিগ্রাম, লৌহ ১১.৫ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৯ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.৪৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.২৯ মিলিগ্রাম, আঁশ ১.৯ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ২.৭ গ্রাম এবং জলীয় অংশ থাকে ১২.২ গ্রাম।

ভেষজ গুনঃ

ব্যবহারঃ গম সাধারণত মানুষের রুটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া গমের কুঁড়া গো-খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ উঁচু ও মাঝারি দোআশ মাটি গম চাষের জন্য বেশী উপযোগী। লোনা মাটিতে গমের ফলন কম হয়।

জাত পরিচিতিঃ বর্তমানে এদেশে অধিক আবাদকৃত গম জাতের মধ্যে কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী ও প্রতিভা রয়েছে। তাছাড়া সৌরভ (বারি গম-১৯) ও গৌরব (বারি গম-২০) নামে ২টি উচ্চ ফলনশীল নতুন জাত অনুমোদিত হয়েছে।

গমের জাত

কাঞ্চনঃ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট কর্তৃক ইউপি-৩০১ এবং সি-৩০৬ এর মধ্যে সংকরায়ণ করে কাঞ্চন জাত উদ্ভাবন করা হয়। এ জাত ১৯৮৩ সালে অনুমোদিত হয়। গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি। কুশির সংখ্যা ৬-৭টি। গাছের নিশান পাতা খাড়া। শীষ বের হতে ৬০-৬৮ দিন সময় লাগে। প্রতি শীষে ৩৫-৪০টি দানা থাকে। দানা সাদা এবং হাজার দানার ওজন ৪৮-৫২ গ্রাম। অন্যান্য জাতের তুলনায় দানা আকারে বড়। চারা আবস্থায় প্রাথমিক কুঁশি মাটির উপরে অবস্থান করে। বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৬-১১২ দিন সময় লাগে। এ জাতটি দীর্ঘ সময় ধরে চাষাবাদ হচ্ছে। বর্তমানে পাতার মরিচা দাগ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় জাতটির ফলন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টর প্রতি ৩.৫-৪.৬ টন ফলন হয়। জাতটি দেশের সকল অঞ্চলে চাষের জন্য উপযোগী। বর্তমানে সারা দেশে কাঞ্চন গম খুবই জনপ্রিয়। বাংলাদেশে প্রায় ৮০ ভাগ এলাকায় কাঞ্চন গমের আবাদ হচ্ছে।

আকবরঃ আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র (ঈওগগণঞ) মেক্সিকোতে ও টোবারী নামাক ২টি জাতের মধ্যে সংকরায়ণের পর একটি কৌলিক সারি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশে আনা হয়। পরবর্তীতে বাছায় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত জাতটি আকবর নামে ১৯৮৩ সালে অসুমোদিত হয়। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৮৫-৯০ সেমি। কুশির সংখ্যা ৬-৭টি। পাতা কিছুটা হেলানো। নিশান পাতা খুবই চওড়া ও লম্বা। শীষ বের হতে ৫০-৫৫ দিন সময় লাগে। প্রতি শীষে ৫০-৫৫টি দানা থাকে। দানা সাদা, আকারে মাঝারি এবং হাজার দানার ওজন ৩৭-৪২ গ্রাম। পাতার গোড়ায় সাদা অরিকল থাকে। ফসল বোনা থেকে কাটা পর্যন্ত ১০৩-১০৮ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করে ফলন হেক্টরপ্রতি ৩.৫-৪.৫ টন হয়। জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল। বৃহত্তর ময়মনসিংহ, যশোর, কুষ্টিয়া ও খুলনা জেলায় এ জাতের ফলন বেশী হয়। তবে আকবর জাতের গম দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও চাষের জন্য উপযোগী।

অঘ্রাণীঃ আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র, মেক্সিকো হতে সনোরা/পি ৪১৬০ ই/ইনিয়া কৌলিক সারিটি ১৯৮২ সালে বাছাইকরণ নার্সারীর মাধ্যমে বাংলাদেশে আনা হয় এবং ১৯৮৭ সালে অঘ্রাণী নামে তা অনুমোদন লাভ করে। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৮৫-৯০ সেমি, কুশির সংখ্যা ৫-৬টি। পাতা কিছুটা হেলানো, নিশান পাতা বড়। গাছের পাতা ও কান্ডে পাতলা মোমের আবরণের মতো বস্তু লক্ষ্য করা যায়। শীষ বের হতে ৫৫-৬০ দিন সময় লাগে। প্রতি শীষে ৫০-৫৫টি দানা থাকে। দানার রং সাদা, আকারে মাঝারি এবং হাজার দানার ওজন ৩৮-৪২ গ্রাম। পাতার গোড়ায় বেগুনি অরিকল থাকে। বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৩-১১০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে ফলন হেক্টরপ্রতি ৩.৫-৪.০ টন হয়। জাতটি পাতার দাগ (ব্লাইট রোগ সহনশীল)। দেরীতে বপনের জন্য অঘ্রাণী জাতের গম বিশেষভাবে উপযোগী।

প্রতিভাঃ থাইল্যান্ড হতে ১৯৮২ সালে প্রেরিত বাছাইকরণ নার্সারীতে কে-ইউ ১২ নামক একটি কৌলিক সারি বাংলাদেশে বাছায় করা হয় এবং ১৯৮৩ সালে তা প্রতিভা নামে অনুমোদিত হয়। গাছের উচ্চতা ৮৫-৯৫ সেমি। কুশির সংখ্যা ৬-৭টি। গাছের নিশান পাতা খাড়া। শীষ বের হতে ৬০-৭০ দিন সময় লাগে। শীষ লম্বা ও প্রতি শীষে ৩৫-৪৫ টি দানা থাকে। দানা সাদা, আকারে বড় ও হাজার দানার ওজন ৪২-৪৮ গ্রাম। ফসল বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৫-১১০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৩.৮-৪.৫ টন ফলন পাওয়া যায়। গমের প্রতিভা জাত পাতার মরিচা ও পাতার দাগ রোগ সহনশীল।প্রতিভা জাতের গম দেশের সকল অঞ্চলে চাষ করা যায়।

সৌরভঃ আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্রে নেকোজারী ও ভেরী জাতের মধ্যে সংকরায়ণকৃত একটি কৌলিক সারি ১৯৮৯ সালে এদেশে এনে বাছাই করা হয় যা ১৯৯৮ সালে সৌরভ (বারি গম-১৯) নামে চাষাবাদের জন্য অনুমোদিত হয়। গাছের উচ্চতা ৯০-১০০ সেমি। কুশির সংখ্যা ৫-৬টি। পাতা চওড়া, হেলানো ও গাঢ় সবুজ। নিশান পাতা চওড়া ও হেলানো। নিশান পাতার নীচের তলে মোমের মতো পাতলা আবরন থাকে। কান্ড মোটা ও শক্ত, ঝড় বৃষ্টিতে হেলে পড়ে না। নীচের গ্লুমের ঠোঁট বড়, প্রায় ৫ মিমি। শীষ বের হতে ৬০-৭০ দিন সময় লাগে। শীষ লম্বা, প্রতিটি শীষে দানার সংখ্যা ৪২-৪৮টি, দানার রং সাদা এবং হাজার দানার ওজন ৪০-৪৫ গ্রাম। বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০২-১১০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে আবাদ করলে হেক্টরপ্রতি ফলন ৩.৫-৪.৫ টন পাওয়া যায়। জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং পাতার মরিচা রোগ প্রতিরোধী। সৌরভ গম দেশের প্রায় সকল অঞ্চলে চাষের জন্য উপযোগী।

গৌরভঃ আন্তর্জতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্রে টুরাকো ও চিলেরো জাতের মধ্যে সংকরায়ণকৃত একটি কৌলিক সারি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে আনা হয়। খুব উৎপাদনশীল জাত হিসেবে সারিটি বাছায় করা হয় যা ১৯৯৮ সালে গৌরব (বারি গম-২০) নামে সারা দেশে চাষাবাদের জন্য অনুমোদন লাভ করে। গাছের উচ্চতা ৯০-১০২ সেমি। কুশি ৫-৬টি। পাতা গাঢ় সবুজ। নিশান পাতা খাড়া, সরু ও ইষৎ মোড়ানো। নীচের গ্লুমের ঠোঁট ছোট প্রায় ২ মিমি। শীষ বের হতে ৬০-৬৫ দিন সময় লাগে। শীষ লম্বা, অগ্রভাগ সরু। প্রতি শীষে ৪৫-৫০টি দানা থাকে। দানার রং সাদা এবং হাজার দানার ওজন ৪০-৪৮ গ্রাম। জীবনকাল ১০০-১০৮ দিন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৩.৬-৪.৮ টন ফলন পাওয়া যায়। জাতটি পাতার মরিচা রোগ প্রতিরোধী এবং পাতার দাগ রোগ সহনশীল। এ জাতটি তাপ সহিষ তাই দেরীতে বপন করলে ভাল ফলন দেয়। বর্তমানে গম জাতসমূহের তুলনায় এ জাত ১০-১২ ভাগ বেশী ফলন দেয়।

বপনের সময়ঃ গমের উচ্চ ফলনশীল জাতসমূহের বপনের উপযুক্ত সময় হল কার্তিক মাসের শেষ থেকে অগ্রহায়ণর তৃতীয় সপ্তাহ (নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত)। যে সব এলাকায় ধান কাটতে ও জমি তৈরী করতে বিলম্ব হয় সে ক্ষেত্রে কাঞ্চন,আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা ও গৌরব বপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।

বপনের পদ্ধতিঃ সারিতে বা ছিটিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। সারিতে বপনের জন্য জমি তৈরীর পর লাঙ্গল দিয়ে সরু নালা তৈরী করে ২০ সেমি দূরত্বের সারিতে ৪-৫ সেমি গভীরে বীজ বুনতে হয়। সার ব্যবস্থাপনাঃ সেচসহ চাষের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ইউরিয়া সারের দুই তৃতীয়াংশ এবং সম্পূর্ণ টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম শেষ চাষের পূর্বে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকী এক তৃতীয়াংশ ইউরিয়া প্রথম সেচের সময় উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সেচছাড়া চাষের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সার অর্থাৎ ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি ও জিপসাম শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। গম চাষে নীচে উল্লেখিত হারে সার ব্যবহার করা প্রয়োজন।

সারের নাম সারের পরিমান/শতকে সেচসহ সেচছাড়া সারের পরিমান/হেক্টর সেচসহ সেচছাড়া ইউরিয়া ৭২৯-৮৯১ গ্রাম ৫৬৭-৭২৯ গ্রাম ১৮০-২২০ কেজি ১৪০-১৮০ কেজি টিএসপি ৫৬৭-৭২৯ গ্রাম ৫৬৭-৭২৯ গ্রাম ১৪০-১৮০ কেজি ১৪০-১৮০ কেজি এমপি ১৬২-২০২ গ্রাম ১২১-১৬২ গ্রাম ৪০-৫০ কেজি ৩০-৪০ কেজি জিপসাম ৪৪৫-৪৮৬ গ্রাম ২৮৩-৩৬৪ গ্রাম ১১০-১২০ কেজি ৭০-৯০ কেজি গোবর/কম্পোষ্ট ২৮-৪০ কেজি ২৮-৪০ কেজি ৭-১০ টন ৭-১০ টন

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ মাটির প্রকার ভেদে সাধারণত ২-৩টি সেচের প্রয়োজন হয়। প্রথম সেচ চারার তিন পাতার সময় (বপনের ১৭-২১ দিন পরে), দ্বিতীয় সেচ গমের শীষ বের হওয়ার সময়। (বপনের ৫৫-৬০ দিন পর) এবং তৃতীয় সেচ দানা গঠনের সময় (বপনের ৭৫-৮০ দিন পর) দিতে হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলে সাথে সাথে আগাছা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনাঃ

রোগ ব্যবস্থাপনাঃ

গমের পাতার মরিচা রোগ দমনঃ পাক্‌সিনিয়া রিকন্ডিটা নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রথমে পাতার উপর ছোট গোলাকার হলুদাভ দাগ পড়ে। শেষ পর্যায়ে এই দাগ মরিচার মত বাদামি বা কালচে রংয়ে পরিনত হয়। হাত দিয়ে আক্রান্ত পাতা ঘষা দিলে লালচে মরিচার মত গুড়া হাতে লাগে। এ রোগের লক্ষণ প্রথমে নিচের পাতায়, তারপর সব পাতায় ও কান্ডে দেখা যায়। দেশের উত্তরাঞ্চলে এ রোগ বেশী হয়ে থাকে।

প্রতিকারঃ

১. রোগ প্রতিরোধী গমের জাত কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরবের চাষ করতে হবে। ২. সুষম হারে সার প্রয়োগ করতে হবে। ৩. টিল্ট ২৫০ ইসি ছত্রাক নাশক (০.০৪%) ১ মিলি আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২-১৫ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে

গমের পাতার দাগ রোগ দমনঃ বাইপোরারিস সরোকিনিয়ানা নামক ছত্রাক এ রোগ ঘটায়। গাছ মাটির উপর আসলে প্রথমে নীচের পাতাতে ছোট ছোট বাদামি ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরবর্তীতে দাগ সমূহ আকারে বাড়তে থাকে এবং গমের পাতা ঝলস দেয়। রোগের জীবাণু বীজে কিংবা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। বাতাসের অধিক আদ্রতা এবং উচ্চ তাপমাত্রা (২৫ ডিগ্রী সে.) এ রোগ বিস্তারের জন্য সহায়ক।

প্রতিকারঃ

১. রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। ২. গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ৩. প্রতি কেজি গম বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। ৪. টিল্ট-২৫০ ইসি (০.০৪%) এক মিলি প্রতি আড়াই লিটার পানিতে মিশিয়ে ১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

গমের গোড়া পচা রোগ দমনঃ স্কেলেরোশিয়াম রলফসি নামক ছত্রাক দ্বারা গমের এ রোগ হয়। এই রোগের ফলে মাটির সমতলে গাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়। পরে তা গাঢ় বাদামি বর্ণ ধারণ করে এবং আক্রান্তস্থানের চারিদিক ঘিরে ফেলে। পরবর্তীতে পাতা শুকিয়ে গাছ মারা যায়। রোগের জীবাণু মাটিতে কিংবা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকে। সাধারণত বৃষ্টির পানি, সেচের পানি দ্বারা এক জমি হতে অন্য জমিতে বিস্তার লাভ করে।

প্রতিকারঃ

১. রোগ প্রতিরোধী কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরব জাতের চাষ করতে হবে। ২. মাটিতে সব সময় পরিমিত আর্দ্রতা থাকা প্রয়োজন। ৩. ভিটাভেক্স-২০০ নামক ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

গমের আলগা ঝুল রোগ দমনঃ আসটিলেগো ট্রিটিসি নামক ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়। গমের শীষ বের হওয়ার সময় এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। উক্ত ছত্রাকের আক্রমণের ফলে গমের শীষ প্রথম দিকে পাতলা পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে। পরে তা ফেটে যায় এবং দেখতে কালো ঝুলের মত দেখায়। ছত্রাকের বীজকণা সহজেয় বাতাসের মাধ্যমে অন্যান্য গাছে এবং অন্য জমির গম গাছে সংক্রমিত হয়। রোগের জীবাণু বীজের ভ্রুণে জীবিত থাকে। পরবর্তী বছর আক্রান্ত বীজ জমিতে বুনলে বীজের অংকুরোদগমের সময় জীবাণুও সক্রিয় হয়ে উঠে।

প্রতিকারঃ

১. রোগ প্রতিরোধী কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা, সৌরভ ও গৌরব জাতের চাষ করতে হবে। ২. রোগমুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। ৩. ভিটাভেক্স-২০০ ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

গম বীজের কালো দাগ রোগ দমনঃ ডেক্সলেরা প্রজাতির ও অলটারনারিয়া প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা গমের এ রোগ হয়। এ রোগের ফলে গমের খোসায় বিভিন্ন আকারের বাদামি অথবা কালো দাগ পড়ে। বীজের ভ্রুণে দাগ পড়ে এবং পরবর্তীতে দাগ সম্পূর্ণ বীজে ছড়িয়ে পড়ে। এ রোগের জীবাণু বীজের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকে।

প্রতিকারঃ

১. সুস্থ্য বীজ সংগ্রহ করে বপন করতে হবে। ২. ভিটাভেক্স-২০০ নামক ঔষধ প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।

ফসল সংগ্রহঃ চৈত্র মাসের প্রথম থেকে মধ্য-চৈত্র (মার্চের শেষ থেকে এপ্রিলের প্রথম) পর্যন্ত কেটে গম সংগ্রহ করতে হয়।