AWD( Alternate Wetting and Drying)

AWD( Alternate Wetting and Drying)

বাংলাদেশের মোট আবাদী জমি ৮.২৯ মিঃ হেক্টর। ইতোমধ্যে ৫.৮০ মিঃ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে। এর মধ্যে বোরো ধানের আওতায় আবাদকৃত প্রায় সম্পূর্ণ জমিই সেচ নির্ভর। কৃষকগণ বোরো ধান চাষের জন্য সাধারণত জমিতে দাঁড়ানো পানি রাখা অপরিহার্য মনে করেন। কিন্তু সর্বদা দাঁড়ানো পানি না রেখে পর্যায়ক্রমে ভেজা এবং শুষ্ক পদ্ধতি ( Alternate Wetting and Drying সংক্ষেপে AWD ) অনুসরণ করে সেচের পানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি মূল্যবান জ্বালানী সাশ্রয় যেমন সম্ভব তেমনিভাবে উৎপাদন বেশী পাওয়া যায়। আবার সাশ্রয়ী পানি দিয়ে সেচ এলাকা বৃদ্ধি তথা অধিক পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের আবাদ সম্প্রসারণ করা সম্ভব। কম পানি ব্যবহার করে ধান চাষে  AWD পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে সেচের উপকরণ যেমন জ্বালানী - তৈল, বিদ্যুৎ এমনকি শ্রমশক্তির ওপর নির্ভরশীলতা অনেকাংশে  হ্রাস পাবে এবং ভূ- গর্ভস্থ পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। ২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ডিএই, বিএডিসি ও ব্রি সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান AWD প্রযুক্তির উপর সীমিত আকারে মাঠ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করে। এ সমস্ত কার্যক্রমের ফলাফল গত ১৮/৯/০৮ ইং তারিখ বিএআরসি- তে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় উপস্থাপন করা হয়। এতে ডিএই কর্তৃক প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায় যে এই পদ্ধতিতে কৃষকের প্রচলিত সেচ পদ্ধতির চেয়ে ৩৭ শতাংশ কম  সেচের পানি ব্যবহৃত হয়েছে এবং ১২% বেশী ফলন পাওয়া গেছে। একইভাবে ব্রি এর ফলাফলে দেখা গেছে এ পদ্ধতিতে ৩০% কম সেচের পানি প্রয়োগ হয়েছে এবং ২৯% কম ডিজেল ব্যবহৃত হয়েছে।

এ ডাব্লিউ ডি প্রযুক্তি

এ ডাব্লিউ ডি ( AWD) পদ্ধতির মূল বিষয় হলো ধান চাষের ক্ষেত্রে জমিতে সার্বক্ষনিকভাবে পানি না রেখে পর্যায়ক্রমে জমি ভেজা ও শুষ্ক পদ্ধতি অনুসরণ করা। জমির পর্যায়ক্রমে ভেজা ও শুষ্ক অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশেষ কৌশল অবলম্বন করতে হয়। ধান চাষে একবার সেচ দিয়ে পরবর্তী সেচের সঠিক সময় নির্ধারনের জন্য জমিতে ছিদ্রযুক্ত পিভিসি পাইপ (পর্যবেক্ষণ নল) বসাতে হয়। এ পাইপে পরবর্তী নির্দিষ্ট লেভেলে পানি নেমে গেলে সেচ দিতে হয়। এভাবে পর্যায়ক্রমে জমিতে সেচ প্রদান করতে হয়।

নলের আকার, নির্মাণ স্থাপন

পিভিসি পাইপ অথবা বাঁশের চোঙ্গা দ্বারা ছিদ্রযুক্ত পর্যবেক্ষণ নল তৈরি করা যেতে পারে। নলের ব্যাস ৭-১০ সে.মি. এবং নলটি ৩০ সেমি লম্বা হবে । নলের নিচের দিকের ২০ সেমি. ছিদ্রযুক্ত এবং উপরের দিকের ১০ সে.মি. ছিদ্র বিহীন থাকবে। নলের গায়ে ১০মি.মি. দূরে ৫ মি.মি. ব্যাসের ছিদ্র থাকবে। এক সারি ছিদ্র থেকে আর এক সারি ছিদ্রের দূরত্ব হবে ১০ মি.মি.। জমিতে নলটি এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যেন ছিদ্রযুক্ত ২০ সে.মি. অংশ মাটিতে এবং ছিদ্র বিহীন ১০.সে.মি. অংশ মাটির উপরে থাকে। নলটি আইলের পাশে এমন সুবিধাজনক স্থানে স্থাপন করতে হবে যেন স্থানটি সমস্ত প্লটের প্রতিনিধিত্বমুলক হয় এবং সহজে এর ভিতর পানির মাত্রা মাপা যায়। জমিতে ছিদ্রযুক্ত নলটির স্থাপনের পর এর ভিতরের মাটি ভালভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রদর্শনীভূক্ত একটি প্লটে এরূপ ৩টি ছিদ্রযুক্ত নল স্থাপন করতে হবে।

সেচের সময় ও পদ্ধতি

১)    জমিতে সেচ আরম্ভ করার পর যখন জমির উপর ৫ সেমি. দাঁড়ানো পানি জমবে তখন সেচ প্রদান বন্ধ করতে হবে। জমির পানি শুকানোর পর নলের ভিতর পানির মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে মাপতে হবে। পর্যবেক্ষণ নলের ভিতর পানির স্তর জমির লেভেল থেকে ১৫ সে.মি পর্যন্ত নিচে নেমে গেলে জমিতে সেচ দিতে হবে।
২)    আগাছা নিয়ন্ত্রণের জন্য চারা রোপণের পর থেকে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত জমিতে ২-৪ সেমি. দাঁড়ানো পানি রাখতে হবে। তবে এ পদ্ধতিতে অতিরিক্ত একবার আগাছা পরিস্কার করার প্রয়োজন হতে পারে।
৩)    গাছ ফুল আসা থেকে দুধ স্তর ( From flowering to milk stage, about 2 weeks ) পর্যন্ত ২ সপ্তাহ জমিতে অবশ্যই ৫ (পাঁচ) সে.মি. দাঁড়ানো পানি রাখতে হবে। 

ভি - নচ ব্যবহার

প্রদর্শনী প্লটে ‘এ ডাব্লিউ ডি’  পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করায় এর সাথে প্রচলিত প্লটের সেচ পানির পরিমাণগত যে পার্থক্য পাওয়া যাবে - তা তথ্য আকারে এলাকার সকল কৃষকের নিকট তুলে ধরার লক্ষ্যে এ প্রদর্শনীর আওতায় উভয় প্লটের ব্যবহৃত সেচ পানির পরিমান নিখুতভাবে পরিমাপ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ কাজে একটি ভি - নচ ব্যবহার করা হবে। এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের মাধ্যমে অতি সহজেই সেচ খরচ, জ্বালানী খরচ সহ অন্যান্য ফলাফল কৃষকের মাঝে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।

ভি- নচ এর আকার, নির্মাণ ও জমিতে স্থাপন পদ্ধতি

১। আকারঃ
অগভীর নলকুপের সেচ পানি পরিমাপের জন্য ৩ ফুট দীর্ঘ ও ২ ফুট প্রস্থ ১৬-১৮ BWG  স্টীলের সিট দ্বারা বিশেষভাবে ভি - নচ তৈরী করতে হয়। ভি - নচ পরিমাপের উপরের অংশ ইংরেজী- v অক্ষরের মত খোলা রাখা হয় যার মধ্য দিয়ে সেচ পানি প্রবাহিত হয়। খোলা অংশের সংযোগস্থলে উভয় পার্শ্বদ্বয় ৯০ ডিগ্রি কোণে মিলিত হয়। এর দুটি পার্শ্বই ধারাল থাকে।

২। ভি - নচ জমিতে স্থাপনঃ
নির্ধারিত প্লটের পানি প্রবেশমুখে ভি - নচটি খাড়া ভাবে এবং প্রবাহের সাথে আড়াআড়িভাবে করে স্থাপন করতে হবে। ভি - নচ দিয়ে পানি প্রবাহ চলমান অবস্থায় ভি - নচের ফাঁকা অংশের নিচের দিকে শীর্ষবিন্দু অর্থাৎ চুড়া বরাবর উলম্বভাবে স্কেল বসিয়ে পানির উচ্চতা পরিমাপ করতে হবে। মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহের জন্য এটি অত্যন্ত সহজতর পদ্ধতি। এখানে উলেস্নখ্য যে, ভি - নচের উপর স্কেল বসিয়ে পানির উচ্চতা পরিমাপের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত ডাটায় সামান্য ক্রটি থাকতে পারে। কিন্তু প্রদর্শনী  প্লট ও প্রচলিত প্লট উভয় ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে তুলনামূলক বিশ্লেষণে এ ধরণের ক্রটি কোন প্রভাব ফেলবে না।

৩। সেচ পানির পরিমান নির্ণয়ঃ
নচের উপর পানির উচ্চতার তথ্য ব্যবহার করে পানির প্রবাহ নির্ণয় করতে হবে। অতঃপর প্লটে সেচ প্রদান শুরু করার সময় থেকে জমিতে ৫ সে.মি. দাঁড়ানো পানি হওয়া পর্যন্ত সময়সীমার তথ্য সংগ্রহ রাখতে হবে। পানির প্রবাহের সাথে সেচ প্রদানের সময় গুণ করে সেচ পানির পরিমাণ নির্ণয় করা হবে। প্রদর্শনী প্লট ও প্রচলিত প্লট উভয় ক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়ায় তথ্য সংগ্রহ ও পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে।