Pages

Wednesday, 25 May 2011

গোলাপের ক্ষতিকর আঁশ পোকা ও তার দমন ব্যবস্থাপনা

গোলাপের ক্ষতিকর আঁশ পোকা ও তার দমন ব্যবস্থাপনা

গোলাপ ফুল ছোট বড় সবার প্রিয়। এ ফুলের পাঁপড়ির বিন্যাস, রঙের বাহার ও সৌরভ মানুষের মনকে আকর্ষণ করে। বসতবাড়ির বাগানে, বারান্দায় বা ছাদে, টবে অন্যান্য ফুল গাছের সঙ্গে অনেকেই ২-৪টি গোলাপ গাছ লাগিয়ে থাকেন। আজকাল অনেকেই আবার বাণিজ্যিকভাবেও গোলাপের চাষ করে অর্থ উপার্জন করছেন। গোলাপ সারাবছরই ফোটে। গোলাপ চাষের অন্যতম সমস্যা হলো পোকামাকড়। গোলাপ গাছ যেসব পোকামাকড় দ্বারা তিগ্রস্ত হয় তার মধ্যে একটি হলো আঁশ পোকা। এ পোকা গোলাপ গাছের যথেষ্ট তি করে থাকে। সময় মতো, এ পোকা দমনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অনেক সময় গোলাপ গাছ মারাও যেতে পারে।

এ পোকা দেখতে লাল-বাদামি মোমসদৃশ আঁশের মতো। মাঝে মাঝে এরা অধিক সংখ্যায় গোলাপ গাছের কচি কাণ্ড আবৃত্ত করে ফেলে। ফলে গাছের স্বাভাবিক সতেজভাব থাকে না। আক্রান্ত ডালের বাকলে গুটি বসন্তের মতো দাগ দেখা যায়। এদের দেখে পোকা বলে মনে হয় না। ছালের অংশ বলেই মনে হয়। প্রতিটি আঁশ মানে এক একটি পোকা। প্রথম অবস্থায় এ পোকা অল্প সময়ের জন্য স্থান পরিবর্তন করলেও পরে স্থায়ীভাবে এক জায়গায়ই বসবাস করে। আঁশ পোকা তার ছেদন উপযোগী মুখাঙ্গ গাছের কলায় ঢুকিয়ে দিয়ে দৈহিক পুষ্টি ও বৃদ্ধির জন্য গাছের রস শুষে খেতে থাকে। আঁশ পোকার অবিরাম রস শোষণের ফলে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত গাছ ক্রমেই দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে।

এ পোকার বিস্তারলাভ করার পদ্ধতি গোলাপ প্রেমিকদের কাছে কৌতূহলজনক ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষ আঁশ পোকার তুলনায় স্ত্রী আঁশ পোকা আকারে বড় ও কমবেশি গোলাকার। পুরুষ আঁশ পোকা একটু লম্বাটে ধরনের এবং সাধারণ অবস্থায় ডানাবিহীন। কিন্তু প্রতি বছর  বসন্তকালে আঁশ পোকার মধ্য থেকে কিছু ডানাযুক্ত পুরুষ পোকার উদ্ভব হয়। এরা প্রাপ্তবয়স্ক, গোলাকার স্ত্রী আঁশ পোকাকে নিষ্ক্রিয় করে। স্ত্রী আঁশ পোকার কোনো সময়েই পাখা গজায় না এবং এরা স্থান পরিবর্তন করে না। যেখানে আশ্রয় নেয় সেখানেই সবসময় থাকে।

প্রতিটি নিষিক্ত স্ত্রী আঁশ পোকা বহুসংখ্যক বাচ্চা জন্ম দিয়ে থাকে। বুকে হেঁটে চলাচল করতে সম এসব বাচ্চা গোলাপ গাছের নতুন শাখায় আক্রমণ করে এবং তাদের মা-বাপের মতোই আক্রান্ত শাখায় স্থায়ীভাবে বসে রস শোষণের অনিষ্টকর কর্মকাণ্ড শুরু করে। এ অবস্থায় বাচ্চা পোকাগুলো একই গাছের বিভিন্ন ডালে অথবা নিকটবর্তী গাছের ডালে বিস্তারলাভ করে। ডালগুলোর পারস্পরিক সংস্পর্শে অথবা বায়ু প্রবাহের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে এমনটি ঘটে থাকে। এ পোকার বিস্তারলাভের হার অন্যান্য ডানাওয়ালা পোকার তুলনায় কম হয়।

মার্চ-এপ্রিলের দিকে আঁশ পোকার নতুন আক্রমণ শুরু হয়। পরবর্তীতে গ্রীষ্মের তীব্র গরমের প্রভাবে অধিকাংশ আঁশ পোকা মারা পড়ার কারণে এদের কর্মতৎপরতা অনেকাংশে কমে যায়। তবে ছায়াযুক্ত স্থানে অনেক আঁশ পোকাই এ ধরনের ধ্বংসের হাত থেকে রেহাই পায় এবং বেঁচে থাকে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে আবার পোকাগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত এদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকে। এ পোকাগুলো যেহেতু একই স্থানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে এ কারণেই অনেকেই হয়তো আশান্বিত হতে পারেন যে ছোট আকৃতির গোলাপ বাগান এদের কবল থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত রাখা বেশ সহজ হবে। কিন্তু এটা কখনো সম্ভব হয় না। কারণ আঁশ পোকা কেবলমাত্র যে গোলাপ গাছই আক্রমণ করে থাকে তা নয়। এরা ৮৬ (ছিয়াশি) প্রজাতির গাছপালা আক্রমণ করে বলে জানা গেছে। এসব গাছপালার মধ্যে কলা, লেবুজাতীয় গাছ, নারকেল, ডুমুর, আঙ্গুর, আম এবং তুঁত উল্লেখযোগ্য। কাজেই গোলাপ বাগানের কাছে যদি বহুবর্ষজীবী পোষক গাছপালা বর্তমান থাকে তাহলে ুদ্রাকৃতির এ পোকার কবল থেকে গোলাপ বাগানকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত রাখা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবে নিম্নে বর্ণিত দমন ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে গোলাপ গাছকে এ পোকার আক্রমণ থেকে মোটামুটিভাবে মুক্ত রাখা যেতে পারে।

দমন ব্যবস্থাপনা

১।     বাগানে যদি গুটি কয়েক গোলাপ গাছ থেকে থাকে তাহলে দাঁত মাজার শক্ত ব্রাশ দিয়ে আক্রান্ত ডাল ভালো করে ব্রাশ করতে হয়। এভাবে কয়েক দিন পরপর ব্রাশ করলে, আক্রান্ত স্থান হতে পোকা সহজে মাটিতে পড়ে যায় এবং গাছগুলো বিপদ থেকে রা পায়।

২।    খানিকটা তুলা বা স্পঞ্জের টুকরা মেথিলেটেড স্পিরিটে চুবিয়ে নিয়ে গাছের আক্রান্ত জায়গায় কয়েক দিন পরপর মুছে দিলে এ পোকা সহজে মারা যায়।

৩।    যেসব এলাকায় ব্যাপকভাবে গোলাপের চাষ করা হয় সেখানে সতর্কতার সঙ্গে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে। গ্রুপিং করার পর প্রথমবার ও মার্চ-এপ্রিল মাসে যখন বুকে হেঁটে চলা আঁশ পোকার প্রাদুর্ভাব হয় তখন দ্বিতীয়বার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

৪।    প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলিলিটার ডায়াজিনন (ডায়াজন, সেবিয়ন, ডিজিনল) ৬০ ইসি বা ফেনিট্রোথিয়ন (সুমিথিয়ন, সোভাথিয়ন) ৫০ ইসি অথবা ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ইত্যাদি কীটনাশকের যে কোনো একটি আক্রান্ত গাছে সেপ্র করলে কয়েক দিনের মধ্যে আঁশ পোকা মারা যাবে ও গাছ পরিষ্কার হয়ে যাবে।
৫।    প্রুনিং করার সময় আক্রান্ত ডালপালা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

সাবধানতা

ডায়াজিনন, ফেনিট্রোথিয়ন ও ম্যালাথিয়ন গ্রুপের এসব কীটনাশক যেহেতু পশুপাখি ও মানুষের জন্যও বিষাক্ত সেজন্য এগুলো ব্যবহারের ব্যাপারে খুবই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই এসব রসায়নিক ওষুধ প্রয়োগে ব্যবহৃত কোনো যন্ত্রপাতি অথবা পাত্র প্রশিণ প্রাপ্ত নয় এমন ব্যক্তির হাতে ছেড়ে দেয়া যাবে না। কীটনাশক প্রস্তুতকারক ও ফর্মুলেটর কর্তৃক প্রদত্ত সাবধানতাসমূহ দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করতে হবে।

No comments:

Post a Comment