Pages

Sunday, 15 May 2011

স্পিরুলিনা ও মাশরুমের পুষ্টিগুণ

স্পিরুলিনা ও মাশরুমের পুষ্টিগুণ
 
স্পিরুলিনা এক ধরনের সামুদ্রিক শৈবাল। নীলাভ সবুজ রঙের স্পিরুলিনার স্বাদ এবং গন্ধ নেই। অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং আণুবিক্ষণিক এ শৈবাল খালি চোখে দেখা যায় না। তবে অসংখ্য উদ্ভিদ গায়ে গায়ে লেগে থাকে বলে পানির ওপর এরা ভেসে থাকলে সবুজ আস্তরণের মতো মনে হয়।  পানির ওপর থেকে এগুলো ছেঁকে রোদে শুকিয়ে যে পাউডার তৈরি করা হয়- তাই স্পিরুলিনা । জানা গেছে, আফ্রিকার শাদ নামক হ্রদ এলাকায় উপজাতীয়দের কাছে এটি অতি পরিচিত। তারা প্রায় ১০০ বছর ধরে স্পিরুলিনা খেয়ে আসছে। তারা এ সবুজ খাদ্যকে ‘দিহে’ বলে থাকে। অতি সূক্ষ্ম হলেও স্পিরুলিনা বহুগুণের জন্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এ শৈবালে নিম্নোক্ত খাদ্যমানের সন্ধান পাওয়া গেছে-
       
উপাদান           পরিমাণ (প্রতি ১০ গ্রামে)
আমিষ ৫৫-৭০%
আঁশ ২%        
থায়ামিন ভিটামিন/বি১ ০.০৫৫ মিলিগ্রাম
ভিটামিন-এ ১৪০০ আনত্মর্জাতিক
ভিটামিন-বি ৩০ মিলিগ্রাম
খনিজ পদার্থ ৭%
নিকোটেনিক ১.১৮%
লৌহ শর্করা ৫.৮০-১০.২০%
স্নেহ পদার্থ ৬%
জলীয় পদার্থ ৫%
 ইউনিট

এছাড়া স্পিরুলিনাতে প্রচুর পরিমাণ ফসফরাস, দস্তা, পেপসিন ও ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে। আর এ কারণেই এটা সহজপাচ্য। এতে ফাইকো সায়ানিস নামক নীলরঞ্জক পদার্থ রয়েছে যা স্পিরুলিনার ওষুধজনিত মান অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুনিল সমস্যা, রাতকানা, অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা ও দৃষ্টিহীনতা দূর করে। স্পিরুলিনা খাদ্য হিসেবে গ্রহণে স্বাদ ভালো থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
১৯৭৪ সনে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে স্পিরুলিনাকে আগামী দিনের সেরা খাদ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। 
বাংলাদেশের আবহাওয়া স্পিরুলিনা চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। ১৯৯৩ সন থেকে এদেশে স্পিরুলিনার চাষ শুরু হয়েছে। বাড়ির চৌবাচ্চা, বড় হাঁড়ি, ছাদের জলাধার ও প্লাস্টিকের গামলায় এর চাষ করা যায়।
বিশ্বে দামি খাবার হিসেবে এ শৈবালের বেশি চাষ হয় থাইল্যান্ডে। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বাংলাদেশী টাকায় প্রতি কেজি স্পিরুলিনা ১৪ হাজার, যুক্তরাষ্ট্রে ৮ হাজার, ইংল্যান্ডে ১০ হাজার, ফ্রান্সে ২৮ হাজার ও বাংলাদেশে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আশির দশকে ফরাসি স্পিরুলিনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডিলো ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি চত্বরে পুকুর খনন করে স্পিরুলিনা চাষ পদ্ধতির প্রথম প্রচলন করেন।
মানবদেহে পুষ্টি জোগাতে, দুর্বলতা কমাতে এবং রোগ সারাতে যে উপাদান প্রয়োজন তা স্পিরুলিনায় বিদ্যমান বিধায় দেশে এর চাষ সমপ্রসারণ তথা বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
পুষ্টি-স্বাদে অনন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন খাদ্য স্পিরম্নলিনাকে গবেষকরা একুশ শতকের খাদ্য হিসেবে মূল্যায়ন করতে চাইছেন।
এবার মাশরুমের কথায় আসা যাক। খাদ্য হিসেবে মাশরুম এখন আর অপরিচিত কোনো নাম নয়। শুধু সুস্বাদ বলে নয় বরং পুষ্টিগুণেও মাশরুম একটি উপাদেয় খাদ্য। মাশরুমে যে আমিষ থাকে তা দুধ কিংবা সয়াবিন তেলের সমকক্ষ না হলেও তার খুব কাছাকাছি। মানব শরীরের জন্য অপরিহার্য এমাইনো এসিডগুলোর অনেকটাই আছে মাশরুমে। তবে ‘লাইসিন’ এবং ‘ট্রিপটোফনে’ থাকে প্রচুর পরিমাণে। মাশরুমে থাকা প্রোটিন  বা আমিষ খুব সহজে পরিপাকযোগ্য বলে শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য এটি একটি যথোপযোগী খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে শর্করার পরিমাণ কম থাকে বলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এটি একটি উপযোগী খাবার।
খনিজ পদার্থ এবং ভিটামিনের ভাণ্ডার এ মাশরুমে । খনিজ পদার্থ যেমন- আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং কপার রয়েছে এতে যা হাড়ের গঠন ও বৃদ্ধি এবং রক্তশূন্যতা রোধে সহায়তা করে। তাছাড়া ফলিক এসিড, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি প্রভৃতি মূল্যবান উপাদানও এর মধ্যে বিদ্যমান। যেহেতু মাশরুমে শর্করার পরিমাণ কম থাকে এবং প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন বেশি থাকে   সেহেতু শরীরে যারা মেদ কমাতে চান তারা খুব সহজেই এ খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। তাছাড়া কোনো কোনো মাশরুমের নির্যাস কোলস্টেরলের পরিমাণ কমাতেও সাহায্য করে। মাশরুমের মধ্যে থাকে জৈব পদার্থ ‘লেনটিনান’- যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এ পদার্থটি শরীরে ম্যাক্রোফেজ, টিসেল প্রভৃতি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে বিধায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। প্রসঙ্গত একটি উদাহরণ এখানে প্রণিধানযোগ্য। উদাহরণটি হলো- রাশিয়ার একটি ছোট গ্রামের নাম কারাগাসক। এ গ্রামের অধিকাংশ লোক সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় ১০০ বা ততোধিক বছর বেঁচে থাকে। এর রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে জানা গেছে, ওই গ্রামবাসী নিয়মিত মাশরম্নমের চা ‘মানচুরিয়ান চা’ পান করে থাকে, যা তাদের করেছে দীর্ঘায়ু। আরো মজার ব্যাপার হলো- এ দীর্ঘ জীবনে তাদের ত্বকে কোনো ভাঁজ পড়েনি।□

বোরো ধানের বাদামি গাছ ফড়িং দমনে করণীয়

  • বাদামি গাছ ফড়িং বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক উভয় অবস্থাতেই ধান গাছের গোড়ায় বসে রস শুষে খায়। এর ফলে ধান গাছ নিস্তেজ হয়ে যায় এবং জমি ফড়িং পোড়া বা বাজ পোড়া (হপার বার্ন) অবস্থায় পরিণত হয় এবং ধানের ফলন অনেক কম হয়।
  •  যেসব জমিতে ধানের চারা ঘন করে লাগানো হয় সেসব জমিতে আলো ও বায়ু চলাচল বিঘ্নিত হয় এবং এ পোকার বংশবিস্তার তাড়াতাড়ি হয়। এ জন্য চারা সঠিক দূরত্বে (সারি থেকে সারি ২৫ সেমি. এবং চারা থেকে চারা ২০ সেমি.) রোপণ করা উত্তম।
  • ধানের জমিতে প্রচুর উপকারী পোকা থাকে। তাই উপকারী পোকার যাতে ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  • ধানের জমিতে পোকার আক্রমণ কমানোর জন্য সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করতে হবে। তবে উর্বর জমিতে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ কম দিতে হয়। এ ছাড়া বাদামি গাছ ফড়িং আক্রান্ত জমিতে ৭-৮ দিনের জন্য পানি সরিয়ে দিয়ে মাটি শুকাতে হয়। এতে এ পোকার বংশ বৃদ্ধি কম হয়।
  •  ধান গাছ যখন থোড় ও ফুল আসে ঠিক তখনই এ পোকার সংখ্যা বাড়তে থাকে। তাই এ সময় ধান গাছের গোড়া পর্যবেড়্গণ করে পোকার উপস্থিতি যাচাই করম্নন এবং অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিন।
  • এ পোকা দমনের জন্য ধানের জমিতে আলোর ফাঁদ বা হাতজাল ব্যবহার করম্নন। এ ছাড়া ধানের প্রতি কুশিতে গড়ে ১.৫টি বাচ্চা বা পূর্ণবয়স্ক পোকা দেখা গেলে জমিতে অনুমোদিত কীটনাশক সেপ্র করুন।
বিসত্মারিত জানতে স্থানীয় কৃষিকর্মী কিংবা
উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করম্নন।


No comments:

Post a Comment