মাটি ও সার
খ) মাটিতে দ্রবনীয় লবণগ) প্রধান তিনটি উদ্ভিদখাদ্যে উপস্থিতির পরিমানের ভিত্তিতে মাটির উর্বরতার মান এবং সুপারিশ |
১)মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে যথাযথ সার প্রয়োগে ফসলের অধিক উত্পাদনএবং আয় বৃদ্ধি ক) কেন জমির মাটি পরীক্ষা করাবেন উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য মোট ১৬টি খাদ্য উপাদানের প্রয়োজন হয়৷ এদের মধ্যে কার্বণ, হাইড্রোজেন অক্সিজেন -এই তিনটি বাতাস এবং জল থেকে গ্রহণ করে, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার, লৌহ, ম্যাঙ্গানীজ, দস্তা, তামা, বোরন, মলিবডেনাম ও ক্লোরিন - এই তেরটিসংগ্রহ করে মাটি থেকে৷ সুতরাং মাটিই হচ্ছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য সরবরাহকারী মাধ্যম৷ উদ্ভিদের বৃদ্ধি, পুষ্টি, ফলন দেওয়ার ক্ষমতা ইত্যাদি নির্ভর করে যে মাটিতে জন্মাচ্ছে তার গুণাগুনের উপর৷ জমির মাটিতে ঐ খাদ্য উপাদানগুলি সহজলভ্য অবস্থায় যথাযত পরিমাণে থাকলে উদ্ভিদ তাহা গ্রহণ করে উত্তরোত্তর পুষ্টি ও বৃদ্ধি লাভ করে এবং তার ফলন দেওয়ার ক্ষমতাও বাড়ে৷তাই যে কোন সার প্রয়োগ করার আগে জানা দরকার প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান জমির মাটিতে কোন অবস্থায় কতটা পরিমান আছে৷ প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান কম হলে গাছের পুষ্টি, বৃদ্ধি ব্যাহত হবে এবং ফলন দেওয়ার ক্ষমতাও কম হবে৷ আবার খাদ্য উপাদান বেশী হলে তা কোন কাজে লাগবে না৷ সুতরাং প্রয়োজনের তুলনায় অধিক মাত্রায় সার প্রয়োগ অর্থের অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়৷ তাই সার প্রয়োগের সাফল্য পাওয়ার জন্য যে কোন ফসল চাষের আগেই বিভিন্ন উদ্ভিদ খাদ্য উপাদান জমির মাটিতে কতটা পরিমানে আছে তাই জেনে নেওয়া প্রয়োজন৷ এই ব্যবস্থা গ্রহন করলে অল্প খরচে পরিমাণ মতো সুষম সার মাটিতে প্রয়োগ করে মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব হবে এবং মাটির উর্বরতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে৷ খ)মাটির নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতি জমির মাটি পরীক্ষার জন্য মাটির নমুনা ঠিক ভাবে সংগ্রহ করার নির্দ্দিষ্ট পদ্ধতি আছে৷ যে জমির মাটি নেওয়া হবে তার অবস্থান যদি একই রকম হয়, মাটি যদি একই প্রকারের হয়, আগের মরসুমে যদি একই ফসলের চাষ করা হয়ে থাকে এবং জমির আয়তন যদি ১ বিঘা হয় তাহলে সেই জমির ১০ থেকে ১৫ জায়গার মাটির নমুনা এক সাথে মিশিয়ে একটি সংমিশ্রিত নমুনা নিলেই চলবে৷ আর তা না হলে মাটির প্রকার ভেদে, অবস্থানের তারতম্য অনুসারে পূর্ববর্তী মরসুমের চাষ ও সার প্রয়োগের ভিন্নতা অনুসারেগোটা জমিটিকে কতকগুলি ছোট ছোট প্লটে ভাগ করে প্রত্যেক প্লট থেকে আলাদা আলাদা নমুনা নিতে হবে৷ জমির যেখান থেকে নমুনা নেওয়া হবে প্রথমে সেই জায়গাগুলি চিহ্নিত করতে হবে৷ ধান, গম, শাক সবজীর জন্য ১৫ সেমি. গভীরতা থেকে এবং পাট, আলু, আখ ইত্যাদির জন্য ২০ সেমি. গভীরতা থেকে মাটি নিতে হবে৷ নমুনা সংগ্রহের জন্য কোদাল, খুরপী বা শাবল ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে৷ নমুনা সংগ্রহের আগে যে সমস্ত চিহ্নিত জায়গা থেকে নমুনা নেওয়া হবে সেখান থেকে ঘাস, আগাছা ইত্যাদি তুলে ফেলেদিতে হবে৷ কোদাল বা খুরপীর সাহায্যে নমুনা সংগ্রহ করলে প্রথমে ইংরাজী অক্ষরের আকারে V অক্ষরের আকারে একটি গর্ত খুড়ে ঐ গর্তের একপাশ থেকে ১৫ সেমি. বা ২০ সেমি. পুরু মাটির চাপ তুলে নিতে হবে৷ এইভাবে সংগৃহীত মাটির নমুনাগুলি একটি পরিস্কার পাত্রে রাখতে হবে৷ সব জায়গার মাটি নেওয়া হয়ে গেলে পাত্রের মাটি একটি পরিস্কার প্লাসটিক কাপড়ের উপর ঢেলে ভাল করে মিশিয়ে নিতে হবে৷ মাটির সঙ্গে গাছপালার শিকড় বা অন্যান্য আবর্জনা থাকলে সেগুলি বেছে ফেলে দিতে হবে৷ এরপর মাটির চাপগুলোকে গুড়ো করে সমান চারটি ভাগে ভাগ করে বিপরীত দুটি ভাগ ফেলে দিতে হবে৷ বাকী দুটি ভাগকে আবার একসাথে মিশিয়ে পুনরায় সমান চার ভাগে ভাগ করে বিপরীত দুটি ভাগ ফেলে দিতে হবে৷ এইভাবে যখন আধ কেজির মত মাটি পড়ে থাকবে তখন সেটিকে নমুনা হিসাবে রেখে দিতে হবে৷ মাটির নমুনা ভিজে থাকলে সেটি ছায়ায় রেখে শুকিয়ে নিয়ে পলিথিন বা পরিস্কার কাপড়ের থলিতে ভরে চিহ্নিত করণ করার পর পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে৷
মাটির নমুনার সঙ্গে পাঠাবার তথ্যাবলি |
ক্রমিক নং ......... সংগ্রহের তারিখ .............কৃষকের নাম ..................................গ্রাম .............. পোঃ অফিস ............... জেলা .............মৌজা .......... জে.এল.নং ........... দাগ নং .............মাটি নেওয়ার গভীরতা ........... জমির অবস্থান ..............মাটির প্রকার ............ সেচের সুবিধা ..............জল নিকাশের সুবিধা .....................................কি কি ফসলের চাষ করবেন ...................................আগের ফসলের নাম, সার প্রয়োগের পরিমাণও উত্পাদন বিষয়ে মন্তব্য ...........................................কোন কোন ফসলের জন্য সার প্রয়োগেরসুপারিশ করতে হবে .................................................................................................মাটির নমুনা সংগ্রাহকের সাক্ষর | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
২) মাটি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে মাটির মান নির্নয় | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
ক) মাটির অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
পি.এইচ. মেপে মাটির অম্লত্ব বা ক্ষারত্বের পরিমান নির্ণয় করা হয়৷ ০ - ১৪ হচ্ছে পি.এইচ.পরিমাপের সূচকক্রম৷ ৭ হচ্ছে মধ্যবিন্দু৷ পি.এইচ. ৭ এর চেয়ে যত কমবে মাটির অম্লত্ব তত বাড়বে৷ আবার পি. এইচ. ৭ এর উপরে যত বাড়বে মাটির ক্ষারত্ব তত বাড়বে৷ নিরপেক্ষ মাটি অর্থাত্ অম্লও নয় আবার ক্ষারও নয় এই রকম মাটির পি.এইচ. হয় ৬.৫ -৭.৫৷ পি.এইচ. ৫এর কাছাকাছি হলে চুন বা চুন জাতীয় পদার্থ প্রয়োগ করে মাটির অম্লত্ব সংশোধন করতে হবে৷ আবার ৮.৫ এর কাছাকাছি হলে জিপসাম বা প্রয়োজন মতো অন্য দ্রব্য দিয়ে মাটির ক্ষারত্ব সংশোধন করতে হবে৷ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
খ) মাটিতে দ্রবনীয় লবণ | |||||||||||||||||||||||||||||||||||
বীজের অঙ্কুরোদগম এবং গাছের খাদ্য গ্রহন নির্ভর করে মাটিতে দ্রবণীয় লবণের পরিমাণের উপর৷ ১:২ অনুপাতে মাটি ও জলের মিশ্রণে বিদ্যুত্ বহন ক্ষমতা যদি প্রতি মিলি মিটারে ১ মিলিমোর বেশী না হয় তাহলে বুঝতে হবে মাটিতে দ্রবণীয় লবণের পরিমান স্বাভাবিক৷ বিদ্যুত্ বহনের ক্ষমতা ১ মিলিমোর বেশী এবং ২ মিলিমোর কম হলে বীজের অঙ্কুর গজানোর অসুবিধা হয়৷ ২ - ৩ মিলিমোর হলে গাছের ক্ষতি হয়৷গ) প্রধান তিনটি উদ্ভিদখাদ্যে উপস্থিতির পরিমানের ভিত্তিতে মাটির উর্বরতার মান এবং সুপারিশ
|
![]() |
৩) মাটির সংশোধন পদ্ধতি১) মাটির অম্লত্ব সংশোধনে চূণ ও চূণ জাতীয় পদার্থ অবশ্যই ফসল লাগানোর ১মাস আগে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে৷ মাটির প্রকার ভেদে মাত্রা নিম্নরূপ |
মাটির প্রকার হেক্টর প্রতি টনে | চূণ ও চূণ জাতীয় পদার্থ বেসিক স্ল্যাগ |
হালকা মাটি (বেলে , বেলে দো-আঁশ) | ২.৫ - ১.২৫ |
মাঝারি মাটি (দো-আঁশ, পলি দো-আঁশ) | ৫.০ - ২.৫০ |
ভারী মাটি (এঁটেল, এঁটেল দো-আঁশ) | ৭.৫০ - ৩.৭৫ |
২) মাটির ক্ষারত্ব সংশোধনের জন্য জিপসাম ফসল লাগানোর ১ মাস আগে জমিতে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে৷ একরে ১-২ টন প্রয়োগ করতে হবে৷ তবে মাটি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে জিপসাম প্রয়োগ করা উচিত৷ |
৪) মাটি পরীক্ষার সুপারিশ জেনে সারের হিসাব করবো কি ভাবে - দ্রষ্টব্য
|
৫) উদ্ভিদখাদ্য রাসায়নিক সার হিসাবে দিতে গেলে জানা দরকার কোন সার থেকে কি পরিমান (প্রতিশত) পাওয়া যায় |
নাইট্রোজেন ঘটিত সার | নাইট্রোজেন | ফসফেট | পটাশ |
ইউরিয়াএমোনিয়াম সালফেটক্যালসিয়াম এমোনিয়াম নাইট্রেটডাই এমোনিয়াম ফসফেটএ.পি.কে (১০:২৬:২৬) | ৪৬২০-২১২৫১৮১০ | --৪৬২৬ | - - ২৬ |
ফসফেট ঘঠিত সার :সিঙ্গল সুপার ফসফেটট্রিপিল সুপার ফসফেট | ১৬ - ৪২.৫ | ||
পটাশ ঘটিত সার :মিউরেট অব পটাশ | ৬০ | ||
সালফার ঘটিত সার : এমোনিয়াম সালফেটজিপসাম | সালফার ৪০ শতাংশসালফার ৪০ শতাংশ | ||
জিংক ঘটিত সার :জিংক চিলেটেড | জিংক ১২ শতাংশ | ||
বোরন ঘটিত সার :বোরাক্স | বোরন ১০৫ শতাংশ | ||
মলিবডেনাম ঘটিত সার :এমোনিয়াম মলিবডেট | মলিবডেনাম ৫২ শতাংশ |
No comments:
Post a Comment