Tuesday, 10 May 2011

খরাসহিষ্ণু ও স্বল্পজীবনকাল
নেরিকা ধানের চাষ

নেরিকা (NERICA) ধান ‘নিউ রাইস ফর আফ্রিকা’ এর সংক্ষিপ্ত নাম।

এশিয়ান অরাইজা স্যাটাইভা (Oryza sativa) এর সাথে আফ্রিকান অরাইজা গ্ল্যাবারিমা (Oryza glaberrima) সংকরায়ণ করে আফ্রিকা রাইস সেন্টার কর্তৃক ১৯৯০ সালে (ইন্টারস্পেসিফিক) নেরিকা জাতের ধান উদ্ভাবন করা হয়। যা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম সাফল্য।


নেরিকা ধান বর্ধনশীল পর্যায়ে (Vegetative phase) অরাইজা গ্ল্যাবারিমা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাওয়ার ফলে গাছের বৃদ্ধি অত্যন্ত বলবান এবং অরাইজা স্যাটাইভা’র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাওয়ায় নেরিকা উচ্চ ফলনশীল।
নেরিকা ধানের গুণগত বৈশিষ্ট্য

১) খরা সহিষ্ণু, স্বল্প জীবনকাল (৯০-১০০ দিন) পাহাড়ি জমিতে জুম চাষে করা যাবে।

২) কতিপয় রোগবালাই সহিষ্ণু (ব্রাস্ট, রাইস ইয়েলো মোটল ভাইরাস, মাজরা পোকা বা স্টেম বোরার, উঁইপোকা ইত্যাদি) জাত।

৩) শিকড় মাটির গভীরে ৩ ফুট (৯০ সে. মি.) পর্যন্ত প্রবেশ করে মাটির অনেক গভীর হতে খাদ্য উপাদান ও পানি গ্রহণ করতে পারে।

৪) ধান ঝরে পড়ে না, ভাত অত্যন্ত সুস্বাদু, প্রোটিন ১০-১১%।

৫) আলোক সংবেদনশীল এবং বীজের সুপ্ততা নেই। নেরিকা আউশ, আমন ও বোরো এ ৩ (তিন) মৌসুমেই চাষাবাদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।

৬) বৃষ্টিনির্ভর, তাই উঁচু জমিতে চাষাবাদের উপযোগী, দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। প্রয়োজনে গম ফসলের ন্যায় হালকা সেচ দিতে হয়।

৭) ফলন : উপযুক্ত ব্যবস্থাপনায় নেরিকা ধানের ফলন ৬ টন/হেক্টর, মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপনায় ৪ টন/হেক্টর এবং সাধারণ ব্যবস্থাপনায় ২ টন/হেক্টর।


বপন মৌসুম

আউশ: মার্চ-এপ্রিল,   ১৫ ফাল্গুন-১৫ চৈত্র,    জীবনকাল ৯০ দিনের কম

আমন: জুলাই-আগস্ট,  ১৫ আষাঢ়-১৫ শ্রাবণ,  জীবনকাল ৯০ দিন

বোরো:  ডিসেম্বর-জানুয়ারি, ১৫ অগ্রহায়ণ-১৫ পৌষ, জীবনকাল ১০৫-১১৩ দিন


বপন পদ্ধতি ও বীজের হার

ক) ডিবলিং পদ্ধতি : সারি থেকে সার এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ২০x২০ সেমি. (৮ ইঞ্চিx৮
    ইঞ্চি)। বীজের পরিমাণ ৫০-৬০ কেজি/হেক্টর।

খ) ডাইরেক্ট সিডেড রাইস (ডিএসআর) : ড্রাই ডিএসআর পদ্ধতিতে হস্ত দ্বারা অথবা সীড ড্রিল
    ব্যবহার করে বীজ বপন করা যায়।

গ) ছিটিয়ে বপন : বীজের হার ৮০ কেজি/হেক্টর

ঘ) বন্যা পরবর্তী নাবী আমন হিসেবে কাদাময় জমিতে সরাসরি ছিটিয়ে বীজ বপন করা যায়।

সারের পরিমাণ

একরপ্রতি (১০০ শতক) ইউরিয়া ১১০ কেজি (বিঘাপ্রতি ৩৭ কেজি), টিএসপি ৫০ কেজি (বিঘাপ্রতি ১৬ কেজি), এমওপি ৫০ কেজি (বিঘাপ্রতি ১.৭৫ কেজি), বোরাক্স সার ৫ কেজি (বিঘাপ্রতি ১.৭৫ কেজি), দস্তা সার ৫ কেজি (বিঘাপ্রতি ১.৭৫ কেজি), জিপসাম (গন্ধক) ৪০ কেজি (বিঘাপ্রতি ১৩ কেজি)।

No comments:

Post a Comment