মঙ্গা বিষয়ক কিছু কথা
মঙ্গা উত্তরাঞ্চলের জন্য ভয়াবহতম জাতীয় সমস্যা। আশ্বিন - কার্তিক মাসে দিন মজুরদের কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে মঙ্গার অভিশাপ উত্তরাঞ্চলের জনজীবনকে পর্যুদুস্ত করে তোলে। বিশেষত মধ্য আশ্বিন - কার্তিক (১ অক্টোবর - ১৫ নভেম্বর) মাসে কাজের অভাব, খাদ্যের মজুদ নিঃশেষ, সঞ্চয়হীনতা ও দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়াতে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে না থাকায় জীবিকা নির্বাহ কষ্টকর হয়ে পড়লে যে আর্থ সামাজিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয় তাই হলো মঙ্গা। বিগত ৩৫ বছর ধরে বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর অঞ্চলের সকল জেলায় নদী ভাঙন, বন্যা, খরা, প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল উৎপাদন ব্যহত হয় ফলে অভাবের সৃষ্টি হয়। তখন থেকে এ ধরনের অবস্থা আঞ্চলিক ভাষায় মঙ্গা নামে অভিহিত হয়ে আসছে। এহেন পরিস্থিতিতে মঙ্গা মোকাবেলায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, আরডিআরএস, ডিএই, পিকেএসএফ, নর্থ ওয়েস্ট ফোকাল এরিয়া, আরডিএ, প্রভৃতি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে আসছে।
মঙ্গার কারণ
মধ্য আশ্বিন - কার্তিক মাসে ধানের ফুল আসা থেকে ধানের দানা বাঁধা অবস্থা বিরাজ করা পর্যন্ত ধান ক্ষেতে কৃষি পরিচর্য়ার জন্য কোন কৃষি শ্রমিকের দরকার পড়ে না। ফলে কাজের অভাবে কৃষি দিনমজুর কর্মহীন হয়ে পড়ে। হাতে টাকা পয়সা নেই আবার কাজও নেই ফলে বাজারে খাদ্য থাকলেও তা কিনতে পারে না বলে মঙ্গার সম্মুখীন হয়। মঙ্গা দু’ ধরনেরঃ
ক) তীব্র মঙ্গাঃ স্থায়িত্বকাল ৪৫ -৬০ দিন।
খ) আংশিক মঙ্গাঃ স্থায়িত্বকাল ৩০-৪৫ দিন।
ক) তীব্র মঙ্গাঃ স্থায়িত্বকাল ৪৫ -৬০ দিন।
খ) আংশিক মঙ্গাঃ স্থায়িত্বকাল ৩০-৪৫ দিন।
মঙ্গাপীড়িত এলাকার চালচিত্র
বৃহত্তর রংপুরের ৫টি জেলা যথাঃ রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নিলফামারী ও গাইবন্ধা কম বেশি মঙ্গায় আক্রান্ত হয়। বিবিএস এর জরিপে মঙ্গাপীড়িত ৫টি জেলার ৩৫ টি উপজেলায় মোট ২০৩৮১৩০ পরিবারের মধ্যে মঙ্গা পীড়িত কৃষি শ্রমিক পরিবার রয়েছে ৫৯৬৬৪৫টি এবং আরডিআরএস এর জরিপে চরমভাবে মঙ্গাপীড়িত পরিবার ১৬০০ কি.ক্যালরির নিচে খাদ্যগ্রহণ করে এমন পরিবার রয়েছে ৯১৬৭৭টি। পিকেএসএফ এর চলমান প্রাইম প্রকল্পের হাউস হোল্ড জরিপে যে ধারণা পাওয়া যায় সেটা হচ্ছে বৃহত্তর রংপুরের ৫টি জেলায় ২৫টি উপজেলায় মঙ্গার প্রকট বেশি। ৫টি জেলার ২৫টি উপজেলায় ২১২টি ইউনিয়নে সম্ভাব্য পরিবারের সংখ্যা ১১.৪ লাখ। এই ১১.৪ লাখ পরিবারের মধ্যে ৫০% (৫.৭ লাখ) কৃষি পরিবার গরীব যারা দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করেন( এই ৫০% গরীব কৃষি পরিবারের মধ্যে আবার ৫০% গরীব, ২৫% মাঝারী গরীব এবং২৫% অতি গরীব পরিবার)। এ মোতাবেক মঙ্গাপীড়িত প্রান্তিক কৃষক প্রায় ৮.৫৫ লাখ। এ অঞ্চলে কৃষি দিন মজুরের সংখ্যা প্রায় ২৮.৫ লাখ। কৃষি দিন মজুর ও প্রান্তিক কৃষক মিলে মোট ৩৭.০৫ লাখ লোক সম্ভাব্য মঙ্গার শিকার। প্রতিটি পরিবারে গড়ে ৫ জন করে লোক রয়েছে। শস্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তুলতে নতুন শস্য বিন্যাস প্রবর্তন করা হয়। উলেস্নখ্য শস্য বিন্যাস সমূহ হচ্ছেঃ
ক) আগাম আমন ধান (ব্রি দান ৩৩)- আলু - রিলে ভুট্টা।
খ) আগাম আমন ধান (ব্রি ধান ৩৩ ) - আলু - মুগডাল।
গ) আগাম আমন ধান (ব্রি ধান ৩৩ )- গম - মুগডাল।
ঘ) আগাম আমন ধান (ব্রি ধান ৩৩ )- আলু - বোরো।
ঙ) আগাম আমন ধান (ব্রি ধান ৩৩ )- সরিষা - বোরো।
চ) আগাম আমন ধান (ব্রি ধান ৩৩ )- আলু - মিষ্টি কুমড়া।
ছ) আগাম আমন ধান (ব্রি ধান ৩৩ )- আলু - মিষ্টি আলু।
ক) আগাম আমন ধান (ব্রি দান ৩৩)- আলু - রিলে ভুট্টা।
খ) আগাম আমন ধান (ব্রি ধান ৩৩ ) - আলু - মুগডাল।
গ) আগাম আমন ধান (ব্রি ধান ৩৩ )- গম - মুগডাল।
ঘ) আগাম আমন ধান (ব্রি ধান ৩৩ )- আলু - বোরো।
ঙ) আগাম আমন ধান (ব্রি ধান ৩৩ )- সরিষা - বোরো।
চ) আগাম আমন ধান (ব্রি ধান ৩৩ )- আলু - মিষ্টি কুমড়া।
ছ) আগাম আমন ধান (ব্রি ধান ৩৩ )- আলু - মিষ্টি আলু।
শস্য বিন্যাস ভিত্তিক প্রযুক্তি
ক) শেষ আশ্বিন থেকে কার্তিক মাসে ব্রি ধান ৩৩ পাকায় ধান কর্তন ও কর্তনপরবর্তী কার্যক্রম যেমন মাড়াই, ঝাড়াই ও শুকানোতে হেক্টরে ৬৩ কর্মদিবস কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
খ) অগ্রিম ফসল ঘরে ওঠায় মঙ্গার সময় প্রান্তিক কৃষকের খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গ) গো-খাদ্য হিসেবে ধানের খড়ের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঘ) ব্রি ধান - ৩৩ কর্তনের পর পরই আলু চাষের জন্য আইল ছাটা, গোবর সার প্রয়োগ, লাইন টানা, বীজ লাগানো ও লাইন ঢেকে দেয়ার জন্য মঙ্গার সময়ে হেক্টরে ৫৩ কর্মদিবস কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
ঙ) শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি পেয়েছে ও শস্য বহুমুখীকরনে মোট বার্ষিক উৎপাদন বেড়ে গেছে।
চ) রিলে ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষ করায় বর্ষা মৌসুম শুরুর পূর্বে মোচা সংগ্রহ ও শুকানো হয়েছে এবং উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা গেছে। কিন্তু আলুর পর ভুট্টার আবাদ করাতে বর্ষার মধ্যে মোচা সংগ্রহ ও তা শুকানা কষ্টকর হয়েছে এবং বাজার মূল্য কম পাওয়া গেছে।
খ) অগ্রিম ফসল ঘরে ওঠায় মঙ্গার সময় প্রান্তিক কৃষকের খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গ) গো-খাদ্য হিসেবে ধানের খড়ের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঘ) ব্রি ধান - ৩৩ কর্তনের পর পরই আলু চাষের জন্য আইল ছাটা, গোবর সার প্রয়োগ, লাইন টানা, বীজ লাগানো ও লাইন ঢেকে দেয়ার জন্য মঙ্গার সময়ে হেক্টরে ৫৩ কর্মদিবস কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
ঙ) শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি পেয়েছে ও শস্য বহুমুখীকরনে মোট বার্ষিক উৎপাদন বেড়ে গেছে।
চ) রিলে ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষ করায় বর্ষা মৌসুম শুরুর পূর্বে মোচা সংগ্রহ ও শুকানো হয়েছে এবং উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা গেছে। কিন্তু আলুর পর ভুট্টার আবাদ করাতে বর্ষার মধ্যে মোচা সংগ্রহ ও তা শুকানা কষ্টকর হয়েছে এবং বাজার মূল্য কম পাওয়া গেছে।
উপরোক্ত কৃষি প্রযুক্তির পাশাপাশি মঙ্গা নিরসনের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী যেমন- হাঁস - মুরগি ও গবাদি পশুপালন, শাকসবজি ও ফলের চাষ, নার্সারি, হস্ত ও কুটির শিল্প, কৃষিভিত্তিক শিল্প সাময়িকভাবে শাকসবজি ও ফল সংরক্ষণ এবং কৃষি বাজার সৃষ্টি ইত্যাদিও সমন্বয় সাধন করা গেলে মঙ্গা স্থায়ীভাবে নিরসন করা সম্ভব হবে। এজন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
No comments:
Post a Comment