Saturday 14 May 2011

জীবাণু সার

জীবাণু সার

জীবাণুসার একটি জীবাণু ঘটিত সার, যা আপনার জমির স্বাস্থ্য ভাল রাখে ও ১০-৩০ শতাংশ ফলন বাড়ায় ধান, গম, সরিষা, আখ, পাট, চীনাবাদাম, মুগ,কলাই, অড়হড়, মুসুর, সয়াবিন ও সকল প্রকার গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন সব্জীর চাষের ব্যবহারের সুফল আজ প্রমাণিত জীবাণুসার রাসায়নিক সারের বিকল্প নয় পরিপূরক মাত্র

জীবানুসার কী

জীবাণুসারের উপকারিতা

জীবাণুসারের প্রকার

কোন প্রজাতির জীবাণুসার কোন কোন ফসলে ব্যবহার করবেন

১) জীবানুসার কী

প্রকৃতিতে বেশকিছু উপকারী জীবাণু আছে, যারা কৃষি কাজে যথেষ্ঠ উপকার করে থাকে এই জাতীয় উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন উপকারী জীবাণুগুলিকে প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে তাদের বংশ বিস্তার ঘটিয়ে সেই জীবাণুগুলিকে উপযুক্ত উপাদানের মাধ্যমে মাটিতে অথবা বীজের সঙ্গে এথবা চারা গাছের শিকড়ের সঙ্গে প্রয়োগ করে শস্যের বৃদ্ধি ও ভাল ফলন পাওয়া যায় এই সকল উপাদান ও জীবাণুগুলিকে একত্রে জীবাণুসার বলা হয়
                                                                                                         

২) জীবাণুসারের উপকারিতা

(ক) গাছকে (প্রতি একর ১০ কেজি) নাইট্রোজেন মৌল সরবরাহ করে ফলন বৃদ্ধি করে
(খ) ফসফোব্যাকট্রিন
জীবাণুসার প্রয়োগে মাটিতে আবদ্ধ অদ্রবণীয় ফসফেট দ্রবণীয় হয় এবং গাছের ফসফেটের চাহিদা পূরণ করে

(গ) জৈ পদার্থের যোগান বাড়িয়ে জমির উর্বরতা শক্তি ও স্বাভাবিক মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
(ঘ) পরবর্তী শস্যের জন্য জমিতে নাইট্রোজেন সারের যোগান বাড়ায়

(ঙ) খরচের সাশ্রয় হয়

(চ) নাইট্রোজেন ছাড়া উসেচক ( Enzyme), হরমোন ও ভিটামিন সরবরাহ করে ফলে গাছের ডাঁটা, পাতা ও মূলের বৃদ্ধি হয় এবং দ্রুত ফুল-ফল আসে এবং ফলন বৃদ্ধি পায়

(ছ) পরিবেশকে কোন প্রকারে দুষিত করে না

(জ) একাধিক ক্ষতিকারক রোগ
জীবাণু থেকে গাছকে রক্ষা করে

(ঝ) রাসায়নিক সার প্রয়োগের জন্য জমির মাটি পরীক্ষা করা অত্যাবশ্যকীয় কিন্ত্ত 
জীবাণুসার প্রয়োগের জন্য জমির মাটি পরীক্ষা করা অত্যাবশ্যকীয় নয়

(ঞ) গাছের ফলন ১০-৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করে

                                                                                                         

৩) জীবানসার সাধারণত: দুই প্রকারের

১। নাইট্রোজেন সরবরাহকারী জীবাণুসার, যেমন - (ক) রাইজোবিয়াম জীবাণুসার
(খ) আজোস্পাইরিলাম
জীবাণুসার

(গ) আজোটোব্যাকটর
জীবাণুসার

২। ফসফেট দ্রবীভুত করে এমন জীবাণুসার, যেমন -
(ক) ফসফোব্যাকট্রিন

                                                                                                        

৪) কোন প্রজাতির জীবাণুসার কোন কোন ফসলে ব্যবহার করবেন                             

(ক) রাইজোবিয়াম জীবাণুসার - এই জীবাণুসার শুঁটি জাতীয় ফসল যেমন- মুগ,কলাই, অড়হড়, মুসুর, ছোলা, মটর, চীনাবাদাম, বরবটি, সয়াবীন প্রভৃতি গাছের শিকড়ে গুটি তৈরী করে এবং তার মধ্যে বাস করে বায়ুমন্ডলের নাইট্রোজেন আহরণ করে উদ্ভিদকে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে ফসল কাটার পর ঐ গুটিগুলো মাটির মধ্যে থেকে যায় এবং মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় যার ফলে পরবর্তী ফসলে নাইট্রোজেন ঘটিত সারের পরিমাণ কম লাগে এই জাতীয় জীবাণুসারে বছরে একর প্রতি ২০-৪০ কেজি নাইট্রোজেন যোগ করতে পারে
(খ) আজোটোব্যাকটর জীবাণুসার- আজোটোব্যাকটর হল একপ্রকার স্বাধীনজীবি ক্ষুদ্র জীবাণু- যারা বাতাসের নাইট্রোজেনকে সরাসরি মাটিতে আবদ্ধ করতে পারে
এরা বায়ুজীবি জীবাণু মাটিতে উপস্থিত অন্যান্য জীবাণুদের কাজকে প্রভাবিত করে সাধারণত গম, তুলা,পাট, আলু,আখ,ফুল, সূর্যমুখী, সরিষা, ভুট্টা ও সকল প্রকার গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন সব্জীতে ব্যবহার করা যায়
(গ) আজোস্পাইরিলাম জীবাণুসার - আজোস্পাইরিলাম হল একপ্রকার নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী সহযোগী জীবাণু যারা গাছের শিকড় ও মাটি উভয় জায়গায় বাস করে এবং বায়ুমন্ডল থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন আহরণ করে উদ্ভিদকে সরবরাহ করে
এরা, বায়ুজীবি জীবাণু সাধারণত ধান, ভুট্টা, যব, জোয়ার, বাজরা, গম ও সরিষা প্রভৃতি ফসলে ব্যবহার করা যায়
(ঘ) ফসফোব্যাকট্রিন - আমরা মাটিতে যে পরিমাণ ফসফেট সার প্রয়োগ করি তার প্রায় বারো আনাই আবদ্ধ হয়ে যায় এবং গাছ সহজে তা গ্রহণ করতে পারে না
মোতি ফসফোব্যাকট্রিন জীবাণুসার প্রয়োগ করলে ঐ আবদ্ধ ফসফেট দ্রবনীয় হয় এবং গাছ আস্তে আস্তে ঐ দ্রবনীয় ফসফেট গ্রহণ করে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন বাড়ায় যার ফলে ফসফেট সার কম লাগে দানা জাতীয়, ডাল জাতীয়, তৈলবীজ জাতীয় ও সকল প্রকার শাক-সব্জীতে ব্যবহার করা যায়
ফসফেট ও নাইট্রোজেন ঘটিত জীবাণুসার এক সঙ্গেও প্রয়োগ করা যায়

2 comments: