|
উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য ১৬টি খাদ্যোপাদান দরকার। এরমধ্যে ৭টি খাদ্যোপাদান যেমন আয়রন, জিঙ্ক, বোরন, মলিবডেনাম, কপার, ম্যাঙ্গানীজ ও ক্লোরিন উদ্ভিদের খুব কম পরিমানে প্রয়োজন হয়। এই জন্য এদের অনুখাদ্য বলা হয়। খুব কম পরিমানে প্রয়োজন হলেও এর কোন একটি ঘাটতি হলে উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, এরফলে ফলন কমে যায়। এই সমস্যা বর্তমানে রাজ্যের প্রতিটি জেলাতেই দেখা যাচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কিছু অঞ্চলে বিশেষ করে লাল কাঁকুরে মাটি অঞ্চলে জিঙ্ক, বোরন এবং মলিবডেনামের অভাব লক্ষ করা গেছে। |
অনুখাদ্যের ঘাটতি হচ্ছে কেন | মলিবডেনামের অভাব জনিত লক্ষণ |
জিঙ্ক বা দস্তার অভাব জনিত লক্ষণ | আয়রণ বা লোহার অভাব জনিত লক্ষণ |
বোরণ বা সোহাগার অভাব জনিত লক্ষণ | কপার বা তামার অভাব জনিত লক্ষণ |
ম্যাঙ্গানিজের অভাবজনিত লক্ষণ | কৃষিবিভাগ নিদের্শিত বিভিন্ন ফসলে মিশ্র অনুখাদ্যে সুপারিশ মাত্রা |
অনুখাদ্যের ঘাটতি হচ্ছে কেন |
(ক) নিবিড় চাষ এবং অধিক ফলনশীল জাতের চাষ বেড়েছে যাদের অনুখাদ্যের চাহিদা খুব বেশী। এর ফলে শস্য প্রচুর পরিমানে অনুখাদ্য মাটি থেকে আহরণ করছে।খ) জমিতে যথেষ্ট পরিমানে জৈবসার প্রয়োগ হচ্ছে না যার মধ্যে প্রচুর পরিমানে অনুখাদ্য রয়েছে।(গ) বর্তমানে বাজারে যে ধরনের রাসায়নিক সার পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে বিশেষ কয়েকটি খাদ্যমৌল ছাড়া অন্য খাদ্য উপাদান থাকছে না।মাটিতে অনুখাদ্যের অভাব হয়েছে কিনা মাটি পরীক্ষা করে জানা যায়। এছাড়াও ফসলের অনুখাদ্য অভাবজনিত লক্ষণ দেখে মাটিতে অনুখাদ্যের অভাব রয়েছে কিনা বোঝা যায়। অনুখাদ্যের অভাব রয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর অনুখাদ্য প্রয়োগ করা উচিত। অতিরিক্ত অনুখাদ্যের ব্যবহার বা বছরের পর বছর জমিতে অনুখাদ্যের প্রয়োগের ফলে যেমন অর্থের অপচয় হয় তেমনি মাটির স্বাস্হেরও ক্ষতি হয়। তখন অতিরিক্ত অনুখাদ্য গাছের নিকট বিষ হয়ে দাঁড়ায় এবং গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। জমিতে যথেষ্ঠ পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করলে অনুখাদ্যের অভাবজনিত সমস্যা অনেক কম হবে। |
|
জিঙ্ক বা দস্তার অভাব জনিত লক্ষণ |
ধান : চারা রোয়ার ২ সপ্তাহের মধ্যে বয়স্ক পাতার ডগা হলদে ও পরে বাদামী হয়ে যায়। ঐ বাদামী দাগ পাতার ফলকের কিনারা ধরে নীচের দিকে নামতে থাকে। অভাব বেশী হলে বাদামী দাগে মরচে ধরে, যা খয়েরি দেখায়। এজন্য জিঙ্কের অভাব জনিত রোগকে খয়রা রোগ বলে। ধানের পাশকাঠির সংখ্যা কম হয় ও শিকড়ের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।গম : চারার বয়স ১ থেকে দেড় মাস হলে মাঝের পাতার আন্তঃশিরা হলদে হয় ও পরে শুকিয়ে যায়।চীনাবাদাম : পাতা ছোট ও হলদেটে হয়। কান্ডের পর্বমধ্য ছোট হয়ে ঝাড়ুর মত দেখায়।মটর : বয়স্ক পাতার ডগা ও কিনারা শুকিয়ে যায়। কান্ড শক্ত হয়ে যায় এবং গাছে ফুল ধরে না।আলু : পাতা প্রথমে ধূসর বাদামিও পরে ব্রোঞ্জের বর্ণ ধারণ করে। গাছের বৃদ্ধি কমে ফলন কমে যায়।টমেটো : ওপরের পাতা ছোট ও মোটা হয়। পাতায় অন্তশিরা পান্ডিদাগ হয় ও পাতা নীচের দিকে বেঁকে যায়। নীচের বয়স্ক পাতা বাদামী কমলা হয়ে শুকিয়ে যায়।লেবু : পাতা ছোট এবং হলদেটে হয়। পাতাগুলি গুচ্ছভাবে থাকে এবং কোন বৃদ্ধি হয় না। বেশী অভাবে ডাল শুকাতে থাকে। ফলের গায়ে হলদেটে অমসৃণ দাগ হয়।চন্দ্রমল্লিকা : গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ঝাড়ুর আকৃতি ধারণ করে। নতুন পাতা হলদেটে হয়ে নীচের দিকে কুঁকড়ে যায়, ফুল ছোট হয়।প্রতিকার : অভাবযুক্ত জমিতে হেক্টর প্রতি ২০ – ২৫ কেজি জিঙ্ক সালফেট মূল সার বা প্রথম চাপান সারের সঙ্গে প্রয়োগ করা যেতে পারে। মাটিতে একবার অনুখাদ্য প্রয়োগ করলে ২ – ৩ বছর আর অনুখাদ্য প্রয়োগের প্রয়োজন হবে না। অনুখাদ্য পাতাতে প্রয়োগ করা যায়। প্রতি লিটার জলে ০.৫ গ্রাম চিলেটেড জিঙ্ক বা ৫ গ্রাম জিঙ্ক সালফেট প্রতি লিটার জলে গুলে গাছের পাতায় দুবার স্প্রে করার সুপারিস করা যায়। |
|
বোরণ বা সোহাগার অভাব জনিত লক্ষণ |
ধান : নুতন পাতার ডগা সাদাটে হয়ে গুটিয়ে যায়, গাছ বেঁটে হয়, ডগা শুকিয়ে যায়।গম : বোনার ২ মাসের মাথায় পত্র ফলকের মাঝে হলদে বিন্দু হয়। ঐ বিন্দুগুলি জুড়ে গিয়ে বড় হয়। পরে হলদে রঙ কমালতে পরিণত হয়। পাশকাটি ছাড়া, শিষ বার হওয়া ও শিষে দানার পুষ্টি ব্যাহত হয়। চীনাবাদাম : নীচের দিকে পাতার ফলকের দুধারে বাদামী দাগ হয়, ঐ দাগ কালো হয়ে শুকিয়ে যায়।সরিষা : শুঁটি ঠিক মত ধরে না ও শুঁটি ধরলেও দানা পুষ্ট হয় না।মটর : পাতার শিরা সাদাটে হয়। পরে আন্তঃশিরা অংশ হলদে হয়। গাছের বাড়ন্ত ডগা শুকিয়ে যায় ও ফুল ঝরে পড়ে।সয়াবীন : বাড়ন্ত পাতার আন্তঃশিরা অংশ হলদে হয়েও বয়স্ক পাতার নীচের দিকে কুঁকড়ে যায়।ফুলকপি : কান্ড ফাঁপা হয়ে পচতে শুরু করে। ফুল প্রথমে গোলাপি রঙের ও পরে কালচে বাদামি হয়ে শক্ত হয়ে যায়।বাঁধাকপি : মাথা ফাঁপা হয় ও মাথার ভিতরে কচি পাতা বাদামি হয়ে পচে যায়। কান্ডের মাঝের পচা গর্ত দেখা যায়।টমেটো : ডগার কুঁড়ি শুকিয়ে যায়। পাতা মোটা ও ভঙ্গুর হয়। ফলের খোসা খসখসে হয় ও ফল ফেটে যায়।বেগুন : ফল ফেটে যায়।আলু : পাতা গুটিয়ে কাপের মত হয়। শিকড়ের ডগা শুকিয়ে যায়। আলু ছোট হয় ও ফেটে যায়।তরমুজ, লাউ : স্ত্রী ফুলের সংখ্যা কম হয়।লেবু : শাখা প্রশাখা কম হয়। লেবু খুব শক্ত হয় ও ফলের গায়ে বাদামী আঠা লেগে থাকে।আম : আমের কাঁচা ফলের ডগাটা প্রথমে হলদে হয়। পরে ঐ দাগ ধীরে ধীরে বাদামী ও কালো হয়ে পচে যায়। পচা অংশ বাড়তে বাড়তে অনেক সময় আটি পর্যন্ত চলে যায়।নারিকেল, সুপারি : ফুল ঝরে যায় ফল ধরলেও কচি অবস্থায় ঝরে যায়।গোলাপ : ডগার কুঁড়ি শুকিয়ে যায় ও অসংখ্য শাখা প্রশাখা বের হয়।প্রতিকার : অভাবযুক্ত জমিতে হেক্টর প্রতি ৬ – ১২ কেজি বোরাক্স বা সোহাগা মূলসারের সহিত প্রয়োগ করতে হবে। অথবা প্রতি লিটার জলে ২ গ্রাম বোরাক্স বা সোহাগা সলুবোর গুলে পাতায় স্প্রে করতে হবে। |
|
মলিবডেনামের অভাব জনিত লক্ষণ |
চীনাবাদাম : পাতা বিবর্ণ হয় এবং রাইজোবিয়াম জীবাণু দ্বারা বাতাসের নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ ব্যাহত হয়।মটর : বয়স্ক পাতা শুকিয়ে যায়। কিন্ত ডগার পাতা সবুজ থাকে। বাতাসের নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ ব্যাহত হয়।শিম : পাতায় আন্তঃশিরা পান্ডু দাগ হয়, যা বাদামী বর্ণে পরিণত হয়।ফুলকপি : পাতায় কেবল মাত্র মধ্য শিরা অংশ থাকে, কোন ফলক অংশ থাকে না। পাতা কাস্তের মত দেখায়, রঙ গাঢ় সবুজ দেখায়। ফলের স্হানে পাতা গজায়। পাতা বা শাখা ভাঙ্গলে দুধের মত সাদা রস বের হয়। লেবু : বয়স্ক পাতায় প্রথমে হলদে দাগ, যা পরে বাদামি হয়ে যায়। পাতায় আঠালো পদার্থ দেখা যায়। পাতা শুকাতে থাকে এবং ঝরে পড়ে। ফলের সংখ্যা কম হয়।প্রতিকার : অভাবযুক্ত জমিতে হেক্টর প্রতি ১ কেজি আমোনিয়াম মলিডেট মূল সারের সঙ্গে প্রয়োগ করা যেতে পারে। অথবা ০.৫ গ্রাম আমোনিয়াম মলিডেট প্রতি লিটার জলে গুলে পাতায় স্প্রে করতে হবে। |
|
আয়রণ বা লোহার অভাব জনিত লক্ষণ |
আয়রণের অভাব জনিত লক্ষণ প্রধানত গাছের কচি পাতায় দেখা যায়। কচি পাতায় শিরায় সবুজ কণিকার পরিমান কমতে থাকে এবং ক্রমশ হলদে হয়ে যায়। একে পান্ডু রোগ বলে। গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।প্রতিকার : অভাবযুক্ত মাটিতে হেক্টর প্রতি ৫০ কেজি ফেরাস সালফেট মূলসারের সঙ্গে ব্যবহার করা যেতে পারে। অথবা ১০ গ্রাম ফেরাস সালফেট প্রতি লিটার জলে গুলে পাতায় স্প্রে করা যেতে পারে। এছাড়াও চিলেটেড আয়রন এবং পাইরাইট (১.৫ টন প্রতি হেক্টর) প্রয়োগ করেও আয়রনের অভাব দূর করা যায়। |
|
কপার বা তামার অভাব জনিত লক্ষণ |
পাতায় ডগা সাদা হয়। পাতা সরু হয়ে কুকঁড়ে যায়। পর্বমধ্য বৃদ্ধি হ্রাস ফলে গাছকে বেঁটে ও ঝোপের মত দেখায়। ফল গাছকে বেঁটে ও ঝোপের মত দেখায়। ফলগাছের ডগা শুকিযে যায়।প্রতিকার : অভাবযুক্ত মাটিতে হেক্টর প্রতি ৫ কেজি কপার সালফেট মূলসারের সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে। অথবা ২ গ্রাম কপার সালফেট প্রতিলিটার জলে গুলে পাতায় স্প্রে করতে হবে। |
|
ম্যাঙ্গানিজের অভাবজনিত লক্ষণ |
কচিপাতার শিরার মধ্যবর্ত্তী অংশ হলদে হয়ে যায়। আখের পাতায় পরপর হালকা সবুজ রেখা দেখা যায়। প্রতিকার : অভাবযুক্ত মাটিতে হেক্টর প্রতি ২৫ কেজি ম্যাঙ্গানিজের সালফেট মূলসারের সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে। অথবা ৫ গ্রাম ম্যাঙ্গানিজ সালফেট প্রতিলিটার জলে গুলে পাতায় স্প্রে করতে হবে। |
|
কৃষিবিভাগ নিদের্শিত বিভিন্ন ফসলে মিশ্র অনুখাদ্যে সুপারিস মাত্রা |
Dada akta gacher chobi deya kon onukhader ovabe ki rog? dhekale valo hoy
ReplyDeleteখুব ভালো তথ্য।
ReplyDeleteআযরন।ফেরাটা সালফার কোথায় পাওয়া যাবে
ReplyDeleteভাল অনুখাদ্য এর নাম কি।
ReplyDelete