Sunday, 15 May 2011

গাভীর সুষম খাদ্য

গাভীর সুষম খাদ্য
ডা. এ. এইচ. এম. মোস্তফা*

গাভীর দুধের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। গাভীর সুষম খাদ্যের মধ্যে থাকে শুকনো খড়, কাঁচা ঘাস, দানাদার খাদ্য, খনিজ ও প্রয়োজনীয় খাদ্যপ্রাণ (ভিটামিনস)।
গাভীর সুষম খাদ্য তৈরির সময় প্রথমে নির্ণয় করতে হবে গাভীর জন্য কী পরিমাণ শুষ্ক পদার্থ, পরিপাকযোগ্য ক্রুড প্রোটিন, খনিজ খাদ্যপ্রাণ এবং মোট পরিপাকযোগ্য পুষ্টির প্রয়োজন। তারপর বিবেচনায় আসবে-
(ক) গাভীর দেহের ওজন (খ) গাভী গর্ভবতী কি না? (গ) গাভী দুধ দেয় কি না? (ঘ) গাভীর দুধে ননীর পরিমাণ কত? (ঙ) দুধের পরিমাণ কত?
আঁশ বা ছোবরা জাতীয় খাদ্য দু’প্রকার- (১) শুষ্ক খাদ্য ধানের খড়, গমের খড়, খেসারি, মাসকলাই ইত্যাদির খড়, শুষ্ক খাদ্যে পানির পরিমাণ থাকে- ১০-১৫% (২) রসালো ছোবরা জাতীয় খাদ্য যেমন কাঁচা ঘাস, লতাপাতা, গাছের পাতা ও শাকসবজি ইত্যাদি।
দানাদার খাদ্য সাধারণত কম আঁশযুক্ত এবং শুষ্ক হয় যার মধ্যে আমিষ, শর্করা, তেল বা চর্বি জাতীয় উপাদান থাকে গমের ভুসি, চালের কুঁড়া, তিলের খৈল, খেশারির ডাল, সরিষার খৈল, সয়াবিন খৈল, বাদাম খৈল ইত্যাদি দানাদার খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গাভীর সুষম খাদ্য তৈরি করতে বিবেচনায় রাখতে হবে
১। এতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলো সঠিক মাত্রায় থাকতে হবে।
২। খাদ্য উপকরণগুলো সহজলভ্য, সস্তা, চাহিদা পূরণে সমর্থ হতে হবে।
৩। বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে খাদ্যটি তৈরি করতে হবে যাতে খাদ্যটি সুস্বাদ ও সহজপাচ্য হয়।
৪। গাভীর পরিপাকতন্ত্রের ধারণক্ষমতা বেশি তাই গবাদিপশুর পেট না ভরা পর্যনন্ত খাদ্য গ্রহণ করতে থাকে। একটি দেশি গাভীর চেয়ে একটি উন্নত জাতের গাভী অনেক বড় হয়, বেশি দুধ দেয় তাই খায়ও বেশি। সেজন্য খাদ্য প্রদানের সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে গাভীর পেট ভরে এবং পুষ্টির অভাব পূরণ হয়। গাভী পেট ভরে খেতে না পারলে অখাদ্য কুখাদ্য খেয়ে ফেলতে পারে। গাভীর খাদ্য টাটকা পরিষ্কার ছত্রাকমুক্ত হতে হবে। ছত্রাকযুক্ত খাদ্য খাওয়ালে এতে বিষক্রিয়া হয়ে গাভীর এবং দুধের মাধ্যমে নিঃসরণের মাধ্যমে দুধ গ্রহণকারীর ¯স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই ছত্রাকপড়া দুর্গন্ধযুক্ত খাদ্য গাভীকে খেতে দেয়া উচিত নয়।
গাভীর জন্য কাঁচা ঘাস অত্যাবশ্যক। কাঁচা ঘাসে প্রচুর খনিজ পদার্থ ও খাদ্যপ্রাণ থাকে যা সহজে হজম হয়। তাই গাভীকে প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পরিমাণে কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে। গাভীর দেহ গঠনে দুধ উৎপাদনে, গর্ভধারণে, বাচ্চা উৎপাদনে এ দুটি উপাদান অত্যন্ত প্রয়োজন। তাই দুগ্ধবতী গাভীর খাদ্যে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ ও খাদ্যপ্রাণ সরবরাহ করতে হবে। দানাদার খাদ্যের  সাথে নিয়মিত খাদ্যপ্রাণ ও খনিজ মিশ্রণ মিশিয়ে খাওয়ালে এগুলোর অভাব দেখা দেবে না।
দানাদার খাদ্য উপাদানগুলো একত্রে মেশানোর আগে ভেঙে নিতে হবে, তাতে ভালোভাবে মেশানো যাবে এবং সহজে হজম হবে।
আঁশ বা ছোবড়া জাতীয় খাদ্য যেমন- খড়, কাঁচা ঘাস, লতাপাতা, সাইলেজ ইত্যাদি আস্তা বা দা দিয়ে ছোট ছোট করে কেটে গাভীকে খাওয়াতে হবে। এতে খাদ্য দ্রব্যের অপচয় হবে না। গাভীর খেতে সুবিধা হবে এবং হজমে সহায়ক হবে। খড় কুচি কুচি করে কেটে পানি বা ভাতের মাড়ের সাথে ভিজিয়ে অন্যান্য ও দানাদার মিশ্রণ চিটা গুড় মিশিয়ে দিলে গাভী খেতে পছন্দ করে এবং সহজ পাচ্য হবে।
খাদ্য উপকরণ হঠাৎ করে পরিবর্তন করা উচিত নয়। প্রয়োজন হলে আস্তে আস্তে অল্প অল্প করে কমিয়ে বা বাড়িয়ে কয়েক দিনে করতে হবে। নাইট্রোজেন বা আমিষের উৎস হিসেবে গাভীর খাদ্যে পরিমাণ মতো ইউরিয়া ব্যবহার, দুধ উৎপাদনকারী গাভীর জন্য দানাদার খাদ্য মিশ্রণ অত্যন্ত প্রয়োজন। নিচে গাভীর জন্য দানাদার খাদ্যের মিশ্রণের নমুনা দেয়া হলো-
   গমের ভুসি ৫০ কেজি, চালের কুঁড়া ২০ কেজি, খেসারি ডাল ১৬ কেজি, তিল/সরিষা/বাদামের খৈল ১২ কেজি, খনিজ মিশ্রণ ১ কেজি, লবণ ১ কেজি।
একটি দেশী গাভীকে দৈনিক ১.৫-২ কেজি দানাদার মিশ্রণ এবং একটি উন্নত জাতের গাভীকে দৈনিক ৩-৪ কেজি দানাদার মিশ্রণ খাওয়াতে হবে। একটি দেশী গাভীকে দৈনিক ৩ কেজি এবং উন্নত শঙ্কর জাতের গাভীকে দৈনিক ৪ কেজি খড় খাওয়াতে হবে। একটি গাভীকে দৈনিক ১০ থেকে ২০ কেজি সবুজ ঘাস খাওয়াতে হবে।য়
*    পশু চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও লেখক

No comments:

Post a Comment