Wednesday, 25 May 2011

দেশীয় ফল পরিচিতি

দেশীয় ফল পরিচিতি

 এশিয়ার দেশগুলোতে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় ফলের যে বৈচিত্র্য রয়েছে তা বিশ্বের আর কোথাও নেই। এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ৪০০ রকমেরও বেশি ফল জন্মে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ফলই জন্মে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্থান, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপে রয়েছে ফল উৎপাদনের জন্য বৈচিত্র্যময় আবহাওয়া। যে কারণে নানা রকম ফলের বৈচিত্র্যও বেশি। প্রায় ৫০ রকম ফলের আদি নিবাস বা জন্মস্থান দক্ষিণ এশিয়া। এর মধ্যে অন-ত ২০টি ফল এসব এলাকার দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে আবাদ করা হয়। তবে সব ফলই চাষ করা হয় না। অনেক ফল আছে বুনো। তবে স্বাদ বৈচিত্র্যে সেসব ফলও অনন্য। সেগুলোও খাওয়া হয়। এ অঞ্চলে যত ফল জন্মে তার প্রায় ৫৫ শতাংশ ফলই চাষ করা হয় না বা গাছ লাগানো হয় না। ওসব ফলের গাছ আপনা আপনি বনে বাদাড়ে জন্মে, পাখি খায় ও এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বীজ ছড়ায়। তাই অনেকেই সেসব ফলের খোঁজ বা পরিচয় জানেন না। দক্ষিণ এশিয়ায় আবাদকৃত ফলের সিংহভাগই উৎপাদিত হয় বা গাছ লাগানো হয় বসতবাড়িতে ও তার আশপাশে। স্বল্প কিছু প্রধান ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। আম, কলা, পেঁপে, পেয়ারা, লেবু, আনারস, ডুরিয়ান, রাম্বুটান ইত্যাদি এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক ফল। তবে এক এক দেশে এক এক ফল বেশি চাষ করা হয়। যেমন মালয়েশিয়ায় বেশি হয় ডুরিয়ান, রাম্বুটান, আম ও পেয়ারা; ভারতে বেশি হয় নানা রকমের লেবু ও আম, ইন্দোনেশিয়ায় বেশি হয় কাঁঠাল ও আতা বা শরিফা; শ্রীলংকায় নারিকেল, আম ও লেবু; নেপালে লেবু ও আম; ভিয়েতনামে আম, লেবু ও লংগান; ফিলিপিনে আম; চীনে লেবু; বাংলাদেশে আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেয়ারা ইত্যাদি। ফল বিজ্ঞানীরা ৭০টি ফল বাংলাদেশে আছে বলে জানিয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৫টি ফল অবৃক্ষ লতানো প্রকৃতির। তবে লেখক এ পর্যন্ত ১৩২টি ফলকে দেশী ফল হিসেবে শনাক্ত ও তার বর্ণনা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন (তালিকা-১)।
বাংলা নাম
  ইংরেজীর  নাম
উদ্ভিদতাত্তিক নাম
পরিবার
১. অরবরই
২.আকশি
৩. আম
৪. আমলকি
৫. আশফল
৬. আতা
৭. আদা জামির
৮. আকুরা
৯. আঙ্গুর
১০. আনারস
১১. এলাচি লেবু
১২. ওড়া ফল
১৩. কদবেল
১৪. কলা
১৫. কমলা
১৬. করমচা
১৭. করুন জামির
১৮. কাকজাম
১৯. কাটাজামির
২০. কাউফল
২১. কাঁকুর
২২. কাগজি  লেবু
২৩. কাজু বাদাম
২৪. কামরাঙা
২৫. কাঁটাখাসি
২৬. কাঁঠাল
২৭. কাঠবাদাম
২৮. কালোজা
২৯. কুল
৩০. কুমকই
৩১. কুসুম ফল
৩২. কেওড়া ফল
৩৩. কেয়া ফল
৩৪. খিরাই
৩৫. খামো/ঝানা
৩৬. খেজুর
৩৭. খুদিজাম
৩৮.খুদিজাম,বনজাম
৩৯. গজারী ফল
৪০. গাব
৪১. গাবগুলাল
৪২. গোল ফল
৪৩. গোলাপজাম
৪৪. চামফল
৪৫.চালতা
৪৬. চিনার
৪৭. চিহুর
৪৮. চুকুর
৪৯. চেরি
৫০. জলপাই
৫১. জলফই
৫২. জামরুল
৫৩. জাম
৫৪. জামান ফল
৫৫. জারা লেবু
৫৬. জিলাপি ফল
৫৭. জংলী বাদাম
৫৮. জংলী বরই
৫৯. টক আতা
৬০. ডালিম
৬১. ডেউয়া
৬২. ডেওফল
৬৩. ডুমুর
৬৪. ডুমুর
৬৫. তরমুজ
৬৬. তমাল, ডাম্বেল
৬৭. তাল
৬৮. তিমতোয়া
৬৯. তেঁতুল
৭০. তুঁত
৭১. তৈকর
৭২. দেশী আমড়া
৭৩. ননী ফল
৭৪. নলিজাম
৭৫. নারিকেল
৭৬. পইর
৭৭. পদ্ম ফুল
৭৮. পটকা
৭৯. পাটা গোটা
৮০. পানকি চুনকি
৮১. পানিজাম
৮২. পানিফল
৮৩. পেয়ারা
৮৪. পেঁপে
৮৫. পিরালু
৮৬. ফলসা
৮৭. বকুল
৮৮. বন আম
৮৯. বন জাম
৯০. বনবরই/গোটবরই
৯১. বহনারী
৯২. বহেরা
৯৩. বাওয়ালী ফল
৯৪. বাতাবী লেবু
৯৫. বাঙ্গি
৯৬. বিলাতি গাব
৯৭. বিলাতি আমড়া
৯৮. বিলিম্বি
৯৯. বুটিজাম/টেপাজাম
১০০. বেউলাটুকি
১০১. বেল
১০২. বেতফল
১০৩. বেল ফল
১০৪.বেচি,কাটাবহুরী,ডুর
১০৫. বুটিজাম/টেপাজাম
১০৬. ভোলাটুকি
১০৭. মন ফল
১০৮. মহুয়া
১০৯. মাখনা
১১০. মাজুফল
১১১. মুড়মুড়ি/আমঝুম
১১২. মুলাফল
১১৩. যজ্ঞডুমুর
১১৪. রাজকাউ
১১৫. লটকন
১১৬. লালি আম
১১৭. লিচু
১১৮. লুকলুকি
১১৯. লুটকি/দাতরঙা
১২০. শসা
১২১. শরিফা
১২২. শরবতী ফল ট্যাং ফল  প্যাসন ফল
১২৩. শরবতী লেবু
১২৪. শিয়ালকুল
১২৫. সফেদা
১২৬. সাতকরা
১২৭. সুপারি
১২৮. সিঙ্গারা ফল
১২৯. সিহার ফল
১৩০. হরিতকী
১৩১. হামজাম/কাউয়াডুলি
১৩২. হেতাল খেজুর   
Star gooseberry
Aksi,Hargoja,karkota, Mango    
Anola   
Longan         Bullock’sheart      Ada jamir
Ankur Grape   Pineapple
Lemon  
Ora, Chaila
Elephant’s foot apple
Banana             Mandarin
Karanda   
Karun Jamir
Kakjam
Kanta Jamir          Garcinia    -
 Lime
Cashwenut
Carambola          Kantakhasi, Kamkui, Jackfruit
Kathbadam,DeshiBm
Kaloaza,Kulaza   
Jujubi
-  Kusum,Lakka   
-           
-
Pumpkin          Khamo, Jhana, Haoa
Datepalm          Khudijam          Banjam,Khudijam
Gajari
 Riverebony          Gabgulal          Nipafruit
Roseapple
Chaplash   
Indian dellenia  
-       
Chehur ozelle          Cherry   
Indian olive  
-
 Waterapple          Jamun       
Yellow sapota     
 -
-
Wildnut
Jangli Boroi, Anai
Soursop
Pomegranate          Monkeyjack   
Daophal          Fig      Dumur          Water melon   
Tamal,Dambel Palmyarapalm
-  
Tamarind          Mulberry   
Toikar           Hogplum          Noniphal   
Nalijam   
Coconut   
Poir      
Lotus       
Patka,Asar          Pata gota, Faisa Udal   
-  
Panijam   
Waterchestnut
Guava      Papaya   
Piralu       
Phalsa          Bakul      JangliAm   
Banjam   
Ban Boroi, Got Boroi Bahanari   
Bahera   
Baoalilata          Pummelo          Melon            Velvetyapple   
Goldenapple   
Bilimbi          Butijam   
Beula,Beulatuki
Wood apple          Betphal   
Belphal           Madagascarplum Batijam
Bholatuki
Manphal,Mainphal Mahua Maduca indica Makhna  
Peach   
-        
-   
Jagdumur   
Rajkow
Burmese grape
Lali Am, Lata Am      Litchi  
Flcourtia   
Lutki,Datranga  Pumpkin   
Custardapple  

Passionfruit
Mosambi   
Shialkul   
Sapota   
Satkara
Betel nut   
ChineseWater Chestnut -       
Haritaki
-      

Hintal   




Phyllanthus distichus
Ajugi Dillenia pentagyna Mangifera indica................
Emblicaofficinalis Nephelium longana
Annona reticulata
Citrus assamensis
Alangium salvifolium  
Vitis vinifera   
Ananus comosus
Citrus limon
Sonneratia caeolaris
Feronia limonia
Musa sapientum
Citrus reticulata
Carissa caranda
Citrus sp.
Syzygium fruiticosa
Citrus sp.
Garcinia cowa
Cucumismelovar.flexuos
Citrus aurantifolia
Annacardium occidentale
Avverrhoa carambola
Bridelia retusa
Artocarpus heterophyllus
Terminilia catappa
Ehretia acuminata
Zizyphus mauritiana
Bridelia retusa  
Schleichera oleosus
Sonneratia apetala
Pandanus  foetidus
Cuumis sativa
Rhizophora mucronata
Phoenixsylvestris
Syzgium fruiticosum
Syzygium fruiticosum
Shorea robusta
Diospyros peregrina
Diospyros toposia
Nipa(Nypa)
Syzygium jambos
Artocarpus chapasha
Dellenia indica
Cucumismelovar. canomon
Bauhinia vahlii
Hibiscus sabdariffa
Cerasusvulgaris   Olea euopaea
Elaeocarpus floribundus
Eugenia javanica
Syzygium cuminii
Pouteria campechiana
Citrus aurantifolia

Pithecellobium dulce
Sterculia foetida
Zizyphus rugosa
Annona mauricata
Punica granatum
Artocarpus lakoocha
Cearcinia xanthochymus
Ficus carica
Ficus auriculatus
Citrullus vulgaris
Garcinia xanthochymus
Borassus flabellifer
Antidesmaghesaembilla
Tamarindus indica
Morus indica     
Garcinia pedunculata
Spondius pinnata
Morinda citrifolia
Syzygium claviforum
Cocos nucifera
Elaeocarpus tectorius
Nilumbo nucifera
Microcos paniculata
Firmiana colorata
Syzgygium cordatum
Trapa bicornis
Psidium guajava
Carica papaya
Randia uliginosa
Grewia asiatica
Mimusops elengi
Mangifera sylvatica
Syzgygim macocarpa
Zizyphus oenoplea
Cordia dicotoma
Terminilia belerica
Saracolobus globosus
Citrus grandis
Cucumis melo
Diospyros discolor
Spondius dulci
Averrhoa bilimbi  
Cleisocalyx operculatus
Semicarpus anacardium
Aegle marmelos
Calamus erectus
C. rotung   
C. tenuisi
Elaeocarpus floribundus
Flacourtiaindica  
Cleisocalyx operaculatus
Semecarpus anacardium
Randia spinosa
Sapotaceae
Euryale ferox
Persica vulgaris   
Polyanthia sp.
Fermiana colorata
Ficus recimosa
Carallia brachiata
Baccaurea  ramiflora
Willughbea edulis    
Litchi chinensis
Flacourtiajango mas
Melostoma malbathricum
Cuumis sativa
Annona squamosa
Passiflora edulis
Citrus paradisi
Zizyphus oenoplia
Achras zapota
Citrus macroptera   
Areca catechu     
Trapa natans
Bauhinia vahlii
Terminilia chebula
Polyanthia suberosa
Phoenix paludosa

 Euphorbiaceae Dilleniaceae
Anacardiaceae Euphorbiaceae Sapindaceae  Annonaceae
Rutaceae
Alangiaceae Ampelidae
Bromeliacea
Rutaceae 
Sonneratiaceae
Rutaceae
Musaceae
Rutaceae
Apocynaceae
Rutaceae     Myrtaceae
Rutaceae 
Guttiferae
Cucurbitacae  Rutaceae
Anacardiaceae
Averrhoaceae
Euphobiaceae
Moraceae Combretacea Ehretiaceae
Rhamnaceae Euphorbiaceae
Sapindaceae Sonneratiaceae
Pandanaceae
Cucubitacae
Rubiaceae
Palmae 
Myrtaceae
Myrtaceae
Dipterocarpa
Ebenaceae
Ebenaceae
fruiticans Palmae
Myrtaceae  Moraceae 
Dilliniacea
Cucurbitacae Caesalpiniaceae
Malvaceae 
Rosaceae
Oleaceae    Eleocarpacae  Myrtaceae 
Myrtaceae    Sapindaceae
Rutaceae  Ceasalpiniacae
Sterculiaceae  Rhamnaceae
Annonaceae  Lythraceae
Moraceae Guttiferae
 Moraceae 
Moraceae
Cucurbitacae Gutifereae
 Palmae
Euphorbiaceae  Leguminosae
Moraceae
Guttiferae    
Anacardiaceae
 Anacardiaceae  Myrtaceae  Palmae    Elaeocarpaceae
Nilambonacae
Melastomaceae
Sterculiaceae
-
.Myrtaceae    Onagraceae  Myrtaceae
Caricaceae Rubiaceae
Tiliaceae 
Sapotaceae
 Anacardiaceae
Myrtaceae  Rhamnaceae  Ehretiaceae  Combretaceae Asclepiadaceae
Rutaceae
Cucurbitaceae
Ebenaceae Anacardiaceae Averrhoaceae
Myrtaceae Anacardiaceae Rutaceae
Palmae    Elaeocarpaceae
Flacourtiaceae Myrtaceae  Anacardiaceae
Rubiaceae 
Nymphaceae
Rosaceae
Annonaceae Sterculiaceae  Moraceae  Rhizophoraceae  Euphorbiaceae
Apocynaceae   Sapindaceae  Flacourtiaceae  Melastomaceae   Cucubitacae  Annonaceae
Passifloraceae  Rutaceae  Ramnaceae  Sapotaceae  Rutaceae   Palmae
Trapacae    Ceasalpiniaceae
Combretaceae  Annonacae  Palmae
বলাবাহুল্য, এসব ফলের মধ্যে অনেক ফলই আছে বুনো বা বনজ গাছের ফল, যেগুলো খাওয়া যায়। দেশের বন-জঙ্গলে যেসব গাছ আছে তার প্রায় ৬০ প্রজাতির গাছের ফল খাওয়া যায় বলে জানা গেছে। খুঁজলে আরো কিছু ফলের সন্ধান নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু, কলা, আনারস, পেঁপে, নারিকেল ও কুল- এ ৯টি আমাদের দেশের প্রধান ও প্রচলিত ফল; এগুলোকে আমরা সবাই চিনি। অনেকেই হয়তো চিনি আরো কিছু অপ্রধান ও স্বল্প আকারে চাষকৃত ফল সফেদা, কামরাঙা, লটকন, আমড়া, বাতাবি লেবু, কদবেল, বেল, জলপাই, তাল, খেজুর, তেঁতুল, জাম, জামরুল, আমলকী, বাঙ্গি, তরমুজ, পেয়ারা ইত্যাদি ফলকে। কিন' অনেকেই চিনি না লুকলুকি, ডেউয়া, ডেফল, করমচা, জংলি বাদাম, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, গোলাপজাম, তুঁত, সাতকরা, আদা জামির, জামির, মনফল, অরবরই, আশফল, তারকা ফল, গাব, বিলাতি গাব, আতা শরিফা, কাউফল, তৈকর, তিমতোয়া, চালতা, ডুমুর, বৈঁচি, টক আতা, পানি ফল, সিঙ্গাড়া ফল, জিলাপী ফল, পদ্মফল, মাখনা, বকুল, ফলসা, চুকুর, চিকান, পানকি চুনকি, টুকটুকি বা টাকিটাকি, বিলিম্বি, খুদিজাম ইত্যাদি ফলকে। এসব দেশী ফলের মধ্যে অনেকগুলো ফলের আবার অনেক জাতও এ দেশে রয়েছে। এ জন্য প্রথমেই দরকার দ্রুত নানা রকম ফলের ও তাদের জাতগুলোর জার্মপ্লাজম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা। এক তথ্য সূত্রে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট ১০১টি আমের জাত, ৬টি লিচুর জাত, ২১টি বরই ও কুলের জাত, ২৫টি কলার জাত এবং ১টি করে জামরুল ও ডালিমের জাত সংগৃহীত হয়েছে। তবে বেশ কিছু আধুনিক ও উচ্চফলনশীল জাত এর মধ্যে উদ্ভাবিত হয়েছে। এ পর্যন- ভারতে সংগৃহীত হয়েছে ১১০৬টি আমের জাত, ১০৭টি পেঁপের জাত, ২৪টি আনারসের জাত, ৩৬৩টি কলার জাত ও তিনটি প্রজাতির ১২৩ জাতের পেয়ারা। আর কত রকমের লেবু যে সে দেশে পাওয়া গেছে! এ পর্যন্ত ভারতে মোট ৪৫১ রকম বা জাতের লেবুর জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করা হয়েছে। হরেক রকমের লেবু আছে আমাদের দেশেও। অন-ত ৫০ জাতের লেবু শুধু সিলেট অঞ্চলেই আছে। লেবুর মতোই অন্যান্য ফলের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করতে হলে সেসব ফলের সম্ভাব্য উৎপাদন এলাকা সম্পর্কেও ধারণা থাকা দরকার। যেমন- আম ভালো হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ; লেবু হয় সিলেটে; আনারস হয় মধুপুর ও সিলেটে; কাঁঠাল হয় গাজীপুরের শ্রীপুরে; কাউফল হয় বাগেরহাটে; সফেদা হয় সাতক্ষীরা ও খুলনায়; পেয়ারা হয় পিরোজপুরে ইত্যাদি। তবে এ ফলগুলোর অধিকাংশই এখন বিপন্ন। বসতবাড়িতে দু-একটি গাছ রয়েছে, বনে-জঙ্গলেও কিছু আছে। অথচ পুষ্টি মানে এমনকি স্বাদ বৈচিত্র্যে এসব ফলের কোনো তুলনা হয় না। কেননা এক এক ফলের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ এবং ভেষজমূল্য এক এক রকম। অথচ এক রকম অবহেলা করেই আমরা আমাদের এসব ফলকে হারাতে বসেছি। তবে আমাদের সৌভাগ্য, এখনো অল্পস্বল্প হলেও এর অনেক ফলই দেশের মাটিতে টিকে আছে।
        দেশীয় এসব ফলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল- এসব ফল একরকম বিনা যত্নেই এ দেশের মাটিতে ভালো ফলে। সাধারণত এসব ফলের গাছে তেমন কোনো সার সেচ দেয়া হয় না। এ দেশের মাটি ও জলবায়ুতে খুব ভালোভাবে এসব ফলের গাছ মানিয়ে গেছে। ঝড়ে বাতাস কিংবা বন্যা খরাও অনেক দেশী ফলের গাছকে সহজে মারতে পারে না। বরেন্দ্র এলাকার শুকনো খটখটে মাটির বুকে যেমন বরই গাছকে ফল ভরা মাথা নিয়ে হাসতে দেখেছি তেমনি কুয়াকাটার পাশে গঙ্গামতির নোনা বালির চরের জঙ্গলেও সমুদ্রের মধ্যে গোটবরইয়ের গাছকে দেখেছি ফলে ভরা। এই যে দেশী ফলের ব্যাপকভাবে খাপ খাইয়ে নেয়ার ক্ষমতা, তা কিন' অনেক বিদেশী ফলেরই নেই। দেশী ফলের আর একটা সুবিধা হলো, বিদেশী ফলের বা উন্নত জাতের ফল গাছের মতো এসব ফল বা ফল গাছে অত বেশি রোগ পোকার আক্রমণ হয় না। তবে দেশী ফলে সবচেয়ে বেশি যেটা মেলে তা হলো পুষ্টি। দেশী ফলের মতো এত বেশি পুষ্টি কখনো বিদেশী ফলে মেলে না। একটা ছোট্ট আমলকীতে যে পরিমাণ ভিটামিন সি আছে তা পাঁচটা বড় কমলাতে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না।এমনকি কোনো কোনো দেশী ফল ফলনের দিক দিয়ে প্রচলিত অনেক ফলের চেয়ে ভালো। ডেউয়া, কদবেল, আমলকী আমরা অনেকেই খেতে চাই না। কিন' এর মধ্যে যে পরিমাণ ভিটামিন সি আছে তা আপেল, কমলা বা আম, কাঁঠাল থেকে পাওয়া যাবে না। অপ্রচলিত ফলের অধিকাংশই সাধারণত টক স্বাদের। তাই এসব ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। আর এ ভিটামিনটি দেহে জমা রাখার কোন নিয়ম নেই। তাই প্রতিদিনের ভিটামিন সি প্রতিদিনই কাঁচা ফল খেয়ে সংগ্রহ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে অপ্রচলিত ফল এর যোগান বেশ ভালোভাবেই দিতে পারে। কাঁঠালের চেয়ে ডেউয়াতে আমিষ বা প্রোটিন কিন' কম নেই। কিন্তু' টক বলে অনেকে খাই না। অথচ ডেওয়ার মধ্যে আমিষের সাথে মিলছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। অন্যান্য পুষ্টি তো আছেই। সেই সাথে আছে এসব ফলের বিভিন্ন রোগ সারানোর অদ্ভুত ক্ষমতা।
    আমলকী হরিতকি বহেড়ার মতো কবিরাজী ফল প্রচলিত কোন ফলের মধ্যে কি আছে? তাছাড়া আমাদের দেশে কলা, কুল, নারিকেল ছাড়া প্রায় সব ফলই জন্মে গ্রীষ্ম বর্ষায়। কিন্তু দেশী অনেক ফল আছে যেগুলো অন্য মৌসুমেও জন্মে। তাই সারা বছর ধরেই বলতে গেলে ফল খাওয়ার একটা সুবিধে মেলে। শুধু পুষ্টি বা প্রাপ্যতার দিক দিয়ে নয়, এখন অনেক দেশী ফলের দাম বিদেশী ফলের চেয়ে কম নয়। একটা ভালো ফল না দেয়া কদবেল বা বেলের গাছ থেকে বছরে ৫০০০ টাকার বেল বিক্রিও বিচিত্র নয়।
        তাই অপ্রচলিত এসব দেশী ফল চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও এ দেশে রয়েছে। অন্যান্য দেশও সে সুযোগ নিচ্ছে।  যেমন এবার কম্বোডিয়া গিয়ে দেখলাম, বিভিন্ন পার্টিতে আপ্যায়ন শেষে বা বড় বড় হোটেলে খাবারের শেষে বিভিন্ন রকমের ফল খেতে দেয়া হয়। সেসব ফলের মধ্যে আমাদের লুকলুকি/পানিয়ালা বা টিপাফলকে দেখে একটু অবাকই হয়েছিলাম। পরে জানলাম ওটা ওদের একটা দামী ফল, আসে ভিয়েতনাম থেকে। অথচ, এ দেশে এ দেশী ফলটি নরসিংদীর জঙ্গলে কতই না ফলে, নিউমার্কেট আর বারডেমের সামনে জ্যৈষ্ঠ আষাঢ়ে ফল বিক্রেতারা ঝুড়িভর্তি করে বেচতে বসে। কিন' দু’চারজন ছাড়া ওগুলো আর কেইবা কেনে? শুধু এদেশের বাজার বিক্রির জন্য নয়, বিদেশের বাজারেও এর চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে এ দেশের সাতকরা লন্ডনের বাজারে ঠাঁই করে নিয়েছে। থাইল্যাণ্ড এখন লংগান বা আঁশফল এবং তেঁতুল রফতানি করে প্রচুর আয় করছে। আমাদের দেশেও এসব ফল বেশ ভালোভাবে জন্মে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আঁশফলের উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। তারা তৈকরের জাতও বের করেছে। এখন শুধু একটু উদ্যোগ নিলে এসব রফতানিমুখী ফলকে বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে চাষাবাদ করা যেতে পারে। এ দেশের লটকন ইতোমধ্যে বিদেশের বাজারে ঠাঁই করে নিয়েছে। অন্য ফল বাগানের মধ্যে ছায়াতেও লটকন ভালো হয় বলে এখন নরসিংদীতে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ সমপ্রসারণ চলছে। কুড়িগ্রাম ও গাজীপুরেও লটকন বেশ ভালো হচ্ছে। দেশের অন্যান্য স'ানেও অনুরূপ উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। অন্যান্য দেশী ফলকেও অবহেলা না করে অন-ত দু’চারটি গাছ বসতবাড়ির আঙ্গিনায় লাগানো উচিত। ইতোমধ্যেই অনেক দেশী ফলকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। তাই চাষের উদ্যোগ না নিলে বন থেকে বুনো ফল হিসেবেই হয়ত তা এ দেশ থেকে অচিরেই হারিয়ে যাবে।

1 comment:

  1. ইংরেজী নামের সাথে বাংলা নামের কোন মিল নেই ! ওটা একটু দেখে নিন ! ধন-বাদ!

    ReplyDelete